জীবননগর বেনীপুর বাওড়ের দখল নিয়ে দু’সমিতি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

জীবননগর বেনীপুর বাওড়ের দখল নিয়ে দু’সমিতি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

জাহিদ  হাসান  জিবননগর  প্রতিনিধি  : চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর বাওড়েরলমহল দখল নিয়ে দু’টি

সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আইনি  হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এক পর্যায়ে বর্তমানে দু’পক্ষই
মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। বাওড়ের দখলদারিত্ব নিয়ে যে কোন সময় দু’পক্ষের
মধ্যে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কার মুখে এলাকাবাসী।
জানা গেছে,জীবননগর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর
গ্রামে ৩৪৫ বিঘা খাস জমিতে একটি জলমহাল রয়েছে। জলমহালটির একটি ক্ষুদ্র
অংশ পাশ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার মধ্যে অন্তর্গত। এই জলমহালটির এলাকাবাসীর
নিকট বেনীপুর বাওড় হিসাবে পরিচিত।
এক সময় বৃহদাকারের এ জলাশয়টি ইফাদ প্রকল্প নামের একটি বেসরকারী বিদেশী সংস্থা সরকারের নিকট থেকে বরাদ্দ
নিয়ে এলাকার মৎস্যজীবীদের নিয়ে মৎস্য করে আসছিল। সংস্থাটির প্রকল্প মেয়াদ
শেষ হওয়ার পর এলাকার প্রভাবশালী মহল বাওড়টি তাদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে
পড়ে। বেনীপুর জলমহালকে ঘিরে এলাকায় দু’টি সমিতিও গড়ে ওঠে। বেনীপুর
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’র সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন হারুন
অর-রশিদ। অন্যদিকে বেনীপুর বাওড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসাবে
দায়িত্ব পালন করছেন দীন মোহাম্মদ। এ দু’টি সমিতির সদস্যরা বাওড়টি যে কোন
ভাবে তাদের দখলে নিতে গিয়ে ইতিপুর্বে বেশ কয়েকবার দু’পক্ষের মধ্যে
সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি চলতে থাকে আইনি লড়াইও।
এক পর্যায়ে চলতি বছরের ৯ জুন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জলমহাল
খাস আদায় সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইনি বাঁধা না থাকায় সীমান্ত ইউনিয়ন
ভুমি কর্মকর্তা ও জীবননগর পৌর ভুমি অফিস বেনীপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি
লিমিটেড থেকে সর্বশেষ চলতি মাসের ৮ ডিসেম্বর সাড়ে চার লক্ষ টাকা খাস আদায়
করেন এবং তাদেরকে বাওড়ের কর্তৃত্ব বুঝে দেন। এ অবস্থায় বেনীপুর মৎস্যজীবী
সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি হারুন অর-রশিদ ৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে
উক্ত বাওড়ে লোকজন নিয়ে মাছ ধরতে যান।
হারুন অর-রশিদ বলেন,আমরা ৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন প্রজাতির ১১০ মণ মাছ ধরে তা
জীবিত রাখতে বাওড়ের একটি অংশে সংরক্ষণ করি এবং সেখানে ৬ জন গার্ডকে
পাহারায় রেখে আমরা বাড়ীতে চলে যাই। এই সুযোগে ওইদিন রাত সাড়ে সাতটার দিকে
কথিত বেনীপুর বাওড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দীন মোহাম্মদ দেশীয়
অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২৫-৩০ জনকে নিয়ে বাওড়ের পাহারারত গার্ডদের
জিম্মি করে। তারা বাওড়ে থাকা ছয়টি নৌকার মধ্যে তিনটি ভেঙ্গে-চুরে ক্ষতি
সাধন করে এবং তিনটি নৌকা ও সেখানে সংরক্ষিত সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার ১১০ মণ
মাছ লুট করে নিয়ে যায়। দীন মোহাম্মদ ও তার লোকজন গার্ডদের হুমকি দিয়ে বলে
যে,বাওড়ে মাছ ধরতে হলে তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে
হবে। অন্যথায় প্রতিদিন বাওড়ে লাশ পড়ে থাকবে। তাদের এমন হুমকিতে গার্ডদের
মধ্যে যেমন আতঙ্ক বিরাজ করছে,তেমনি আমরা বাওড়ে মাছ ধরতে সাহস পাচ্ছি না।
এ ঘটনায় জীবননগর ও পাশ্বর্বর্তী মহেশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে বেনীপুর বাওড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দীন মোহাম্মদ বলেন,আমরা
আদালতের রায়ে বিধি মোতাবেক বাওড় ভোগ দখল করা কালে বেনীপুর মৎস্যজীবী
সমবায় সমিতি লিমিটেড এর সভাপতি হারুন অর-রশিদ ৯ ডিসেম্বর বিকালে বাওড়টি
তাদের দখলে নেয়। আমাদের বিরুদ্ধে নৌকা ও মাছ চুরি এবং নৌকা ভাংচুরের যে
অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা।
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইসাবুল ইসলাম মিল্টন
মোল্যা বলেন,দীন মোহাম্মদরা আদালতের আইন অমান্য করে বর্তমানে বাওড়টি
তাদের দখলে রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এলাকার
শান্তিপুর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছেন।
জীবননগর পৌর ভুমি অফিস ও সীমান্ত ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা এবং
বেনীপুর বাওড় জলমহাল খাস আদায় কমিটির সদস্য সচিব আশরাফুল আলম বলেন,অনেক
আগেই ইফাদ প্রকল্প শেষ হয়েছে। তারপরও ওই প্রকল্পের পক্ষে বেনীপুর বাওড়
ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দীন মোহাম্মদ আদালতে মামলা করেন। সেই মামলার
রায় সরকারের পক্ষে আসে। গত ৯ জুন জীবননগর উপজেলা ’বেনীপুর বাওড়’
খাস-আদায় সংক্রান্তে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বেনীপুর মৎস্যজীবী সমবায়
সমিতি লিমিটেড এর আবেদনের ভিত্তিতে তাদেরকে জলমহালটি দেয়া হয়েছে।
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল খালেক বলেন,বেনীপুর বাওড়ের মাছ ও
নৌকা চুরি এবং নৌকা ভাংচুরের ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
ঘটনাস্থলটি পুলিশের নজরদারিতে আছে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা
হবে।

Comment here