টাঙ্গাইলে ভালোবেসে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে নির্যাতনের শিকার খ্রিষ্টান নারী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

টাঙ্গাইলে ভালোবেসে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে নির্যাতনের শিকার খ্রিষ্টান নারী

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ; প্রেমের টানে মুসলিম প্রেমিককে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এক খ্রিষ্টান নারী। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার ফুলবাগচালা ইউনিয়নের পীরগাছা গ্রামে।মায়াবী নকরেক নামে ওই নারী পীরগাছা গ্রামের অতিন্দ্র সিমসাংয়ের মেয়ে ও লিংকন নকরেকের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের জননী। বিয়ের পর প্রাণভয়ে উভয়ে ঢাকায় অবস্থান করলেও স্থানীয় মাতব্বরদের হস্তক্ষেপে বর্তমানে মুসলিম স্বামীর বাড়িতে বসবাস করছেন ওই নারী।

উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিম বলেন, অরণখোলা গ্রামের তিন সন্তানের জনক মো. মোস্তফাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন দুই সন্তানের জননী মায়াবী নকরেক। গত ২০ মার্চ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রেখেছেন আছিয়া বেগম।

গত ২৮ জুলাই নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে মোস্তফাকে বিয়ে করেন আছিয়া। বিয়ের পর উভয়ে সন্তান ও পরিবার রেখে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে বর্তমানে মোস্তফার বাড়িতে বসবাস করছেন ওই নারী।

এর আগে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মোস্তফার প্রথম স্ত্রী আসমার বোনের জামাই হারুন অর রশিদের সহায়তায় বাড়িতে এনে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করা হয়। সালিশি বৈঠকে স্থানীয় আদিবাসী নারী বিহলা, মনিতা ও সুধা মিলে আছিয়াকে বেধড়ক মারধর করেন। পরদিন সকালে আছিয়াকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে বাবা অতিন্দ্র সিমসাংয়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আছিয়াকে স্থানীয় ইউপি সদস্য নগেন্দ্রের জিম্মায় দেন সালিশদাররা।

তবে আছিয়া নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও বিয়ে করায় ইউনিয়ন পরিষদের সমর্থন পান। পরে তাকে মোস্তফার সঙ্গে বসবাসের অনুমতি দেয় স্থানীয় সালিশদাররা।

এ বিষয়ে মোস্তফা বলেন, প্রথম স্ত্রী ও স্থানীয় কতিপয় দালালের অত্যাচারে এখনো নিজ বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে পারছি না আমরা। এ অবস্থায় আমার বোনের জামাই আনসার আলীর বাসায় থাকছি আমরা। পাশাপাশি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কৃষি জমিতে উৎপাদিত ফসল বিক্রির টাকা লুটপাট ও বাড়িঘর দখলের হুমকি দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু দালাল।

আছিয়া বলেন, মোস্তফাকে বিয়ের পর বাড়িতে উঠাতো দূরের কথা হারুন অর রশিদের সাজানো গ্রাম্য সালিশে আমার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেনি কেউ। নির্যাতনের পর হাসপাতালে ভর্তি হলেও সেখানে কেউ দেখতে যায়নি। আমাকে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত হারুন অর রশিদ, আনিস, আব্দুল মালেক ও ইব্রাহীমের নামে মধুপুর থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। মধুপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেননি। মোস্তফাকে ভালোবেসে ও ধর্ম ছেড়ে বিয়ে করেছি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মোস্তফার সঙ্গে থাকব আমি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুপুর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, ওই নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়নি। ঘটনার দিন অন্য একটি মামলার পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে ওই গ্রামে যাই আমরা। পরে স্থানীয়দের অভিযোগে ওই ঘটনায় আয়োজিত সালিশি বৈঠকে যাই। সালিশি বৈঠকে ওই নারীকে কয়েকজন নারী শারীরিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাই। তবে নির্যাতনের ঘটনাটি মামলা হওয়ার মতো ছিল না বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরে ওই নারীর স্বামী ও স্ত্রীর পরিবারের লোকজন বিষয়টি নিয়ে থানার ওসি কাছে আসেন। ওসি উভয় পরিবারকে বিষয়টি সমঝোতা করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

Comment here