ডলার সংকটে থমকে গেছে উন্নয়নকাজ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ডলার সংকটে থমকে গেছে উন্নয়নকাজ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের ৫ বিমানবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে আছে ডলার সংকটের কারণে। এসব বিমানবন্দরের ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে একটির কাজ চলতি বছর এবং অবশিষ্ট পাঁচটির কাজ আগামী অর্থবছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ডলার সংকটে যথাসময়ে ঠিকাদারির বিল পরিশোধ করতে না পারায় কাজের গতি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

প্রকল্পগুলো পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব প্রকল্পের কাজের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদান করতে হয়। ডলার সংকটের কারণে গত বছর থেকে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু অনাপত্তিপত্র না থাকায় ব্যাংকগুলোও সময়মতো অর্থছাড় করছে না। এতে বিপাকে পড়েছে বেবিচক। বিষয়টি সুরাহার জন্য মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। চলতি ও আগামী অর্থবছরে এসব প্রকল্পে বৈদেশিক চাহিদার পরিমাণ তুলে ধরে গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বেবিচক। চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি গ্রহণের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৯৯.৯৭ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮.১৫ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিল বকেয়া রয়েছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৫ মার্কিন ডলার। কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পটি কাজের অগ্রগতি ৭৯.৬২ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ৬৩.৬৮ শতাংশ। প্রকল্পটি আগামী অর্থবছরে (২০২৪-২৫) শেষ হওয়ার কথা। এ প্রকল্পে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ ১২ হাজার ৩৭০ মার্কিন ডলার। পরবর্তী অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪ মার্কিন ডলার। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রাডারসহ সিএনএস প্রকল্প কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬২ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। এটিও আগামী অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু গত জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। আগামী অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৯৩ লাখ ১৮ হাজার ইউরো। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরামর্শক সেবা (ডিজাইন ফেইজ) প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৫ শতাংশ। প্রকল্পটি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা। গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের বিপরীতে বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ১২৫ মার্কিন ডলার। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। প্রকল্পটি ২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা। গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে বকেয়া রয়েছে ৭৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। আগামী অর্থবছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ১২৫ মার্কিন ডলার। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (১ম পর্যায়) পরামর্শক সেবা (ডিজাইন ফেইজ) শীর্ষক প্রকল্প কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ। প্রকল্পটিতে গত জানুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৪৮ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। আগামী অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে ৮৫ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার।

চলমান ৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ৬ কোটি ১৮ লাখ ৯১ হাজার ৭২৫ মার্কিন ডলার এবং ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা হবে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার ২৮৯ মার্কিন ডলার এবং ৯ কোটি ৩১ লাখ ৮ হাজার ইউরো।

মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বেবিচকের চিঠিতে বলা হয়, বেবিচক-এর আওতায় চলমান প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে নিয়োজিত ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সহিত চুক্তিপত্রের শর্ত মোতাবেক বৈদেশিক মুদ্রায় বিল পরিশোধ আবশ্যক। উল্লেখ্য, অনুমোদিত ডিপিপিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় নির্বাহের বিষয়ে যথাযথ সংস্থান রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে, বর্ণিত প্রকল্পসমূহ নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের জন্য নিয়োজিত ঠিকাদার/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বৈদেশিক মুদ্রায় বিল পরিশোধের অনাপত্তি গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। কিন্তু, বিশ্বব্যাপী সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় সীমিতকরণের বিষয়ে অধিকতর সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় সীমিতকরণের জন্য প্রকল্পসমূহের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন সম্ভবপর হয়নি।

বিষয়টি অতীব জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে চলমান অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ঠিকাদারের/পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিলের বৈদেশিক মুদ্রার অংশ পরিশোধের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক হতে অনাপত্তি গ্রহণে মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তথা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজে গতি ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ৬ কোটি ডলার চাইছে বেবিচক।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, দ্রুতগতিতে ডলার ছাড় করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Comment here