তনু-মিতুকে মনে পড়ে যায় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

তনু-মিতুকে মনে পড়ে যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে’ পুরনো এ প্রবাদ শতভাগ মিথ্যা হয়েছে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের ঘাতকদের ফাঁসির রায়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন বছরেও তদন্তেই আটকে আছে কুমিল্লা ময়নামতির কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু ও চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু আক্তার হত্যা মামলার বিচারকাজ। কবে তদন্ত শেষ হবে, কবে শেষ হবে বিচারকাজ- এ নিয়ে সংশয়ে নিহত তনু ও মিতুর স্বজনরা। গতকাল নুসরাত হত্যা মামলার রায় হওয়ার পর তাদের প্রত্যাশা, এবার হয়তো দ্রুত এসব হত্যাকা-ের বিচারকাজ সম্পন্ন হবে এবং দোষীরা শাস্তি পাবে।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের অদূরে একটি ঝোপ থেকে কলেজছাত্রী তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী ছিলেন তিনি। একই বছরের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।

ads

গতকাল বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যার ঘটনায় আদালতের রায় শুনে দ্রুত সময়ে তনু হত্যার বিচার দাবি করেন তার মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, বুকের ধন হারানোর ব্যথা মা ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমার অন্তর পুড়ে গেছে। তনু হত্যার বিচার হলে ওর অন্তর শান্তি পেত। বিচারের নামে আমার পরিবার ইতোমধ্যে অনেক কাঁটা-পথ পাড়ি দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া তনু হত্যার বিচার পাওয়া সম্ভব নয়।

তনুর ভাই রুবেল আক্ষেপ করে বলেন, শুধু পরিবার নয়, তনু হত্যার বিচার দেশবাসীরও গণদাবি। দেশবাসী ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হলেও তনু হত্যার বিচার বাস্তবায়ন প্রয়োজন। রুবেল বলেন, তার বোন তনুর বিচার দাবি করতে করতে আমার মা-বাবা এখন ক্লান্ত-শ্রান্ত।

রুবেল জানান, তনু হত্যার পর থেকে তার মা-বাবা দুজনই স্ট্রোক করেছেন। এখন তারা অনেকটাই নির্বাক। বিচারপ্রার্থী হিসেবে তারা বহুবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছেন, পারেননি।

তনু হত্যা মামলাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশ হয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সবশেষে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তবে এতগুলো বছরে তদন্তেই পড়ে আছে পুলিশ। তারা বলছে, তদন্ত চলছে।

এদিকে চট্টগ্রামে খুন হওয়া মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন বলেন, তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি তো রয়েছেই। কিন্তু গত দুবছরে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গেও আমার দেখা বা কথা হয়নি। মামলাটি কোথায়, কী অবস্থায় আছে- তাও জানেন না বলে জানান মেয়েহারা বাবা অবসরপ্রাপ্ত এ পুলিশ পরিদর্শক।

তিনি আমাদের সময়কে বলেন, মিতুর দুই ছেলেকে তাদের বাবা বাবুল আক্তার কোথায় রেখেছে, জানি না। বছরখানেক আগেও নাতিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতাম। বাবুল আক্তার এখন সেই সুযোগটুকুও দিচ্ছে না। নাতিদের সরিয়ে রেখেছে।

মিতুর বাবা আরও বলেন, মেয়ে হত্যার পর আমার দেওয়া তথ্যে কিছুটা গরমিল ছিল। পরে আমরা সবকিছু তদন্তকারী কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিই। বাবুল আক্তারের পরকীয়া প্রেমের তথ্য পেয়েছি। কাজের বুয়া, সুইপারের কাছ থেকে বাবুল আক্তারের বিষয়ে যেসব তথ্য পেয়েছি, তাও পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু এসব তথ্য দেওয়ার পরপরই কেন জানি মামলার তদন্তের গতি ধীর হয়ে গেল। পুলিশ মামলার অনেক তথ্য বাদ দিচ্ছে।

মোশারফ হোসেনের প্রশ্ন, বাবুল আক্তার যদি মিতু হত্যায় জড়িত না-ই থাকে, তা হলে তার চাকরি গেল কেন? আর তিনি নির্দোষ হলে তার চাকরি কেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি বা হচ্ছে না? আমি চাই দ্রুত সময়ে তদন্তের মাধ্যমে আমার মেয়ে হত্যার বিচার হোক।

Comment here