তীব্র বিরোধিতার পরও বিল পাস, বিএনপির ওয়াকআউট - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

তীব্র বিরোধিতার পরও বিল পাস, বিএনপির ওয়াকআউট

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইনানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে নিতে আইন করার প্রস্তাব বিরোধীদলের তীব্র বিরোধিতার মধ্যেও সংসদে পাস হয়েছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী সংসদ সদস্যদের তীব্র বাদানুবাদের মধ্যে বিলটি পাস হওয়ার পর প্রতিবাদ জানিয়ে ওয়াকআউট করে বিএনপি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা এ আইনের চরম রিরোধীতা করলেও ওয়াক আউট করেননি। বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার আগে জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সময় এর প্রবল বিরোধিতা করেন বিরোধী সংসদ সদস্যরা।

তারা বলেন, ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলো খালি হয়েছে। পূঁজিবাজারে ধস নেমেছে। আর্থিক খাতে অবাধ লুটপাট চলছে। প্রস্তাব্তি আইনটি পাস হলে ব্যাংকখাতের মতো স্বায়ত্তশাসিতসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও দেউলিয়া হয়ে যাবে। কারণ তালিকাভূক্ত ৬১টি প্রতিষ্ঠান নয়, নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।

স্পিকার বিলটি জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোসহ অন্যান্য বিরোধী দলের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে দিলে তা নাকচ হয়ে যায়। এরপর বিরোধী দলীয় সদস্যদের দফা ওয়ারী সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সুযোগ দিলে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে উত্থাপন না করে মন্ত্রীর অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করে সংশোধীগুলো প্রত্যাহার করে নেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। সংশোধনী উত্থাপনকারী সদস্যদের সবার একযোগে প্রস্তাব প্রত্যাহারের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে আর দেখা যায়নি।

‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থা সমূহের উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন-২০২০’ শীর্ষক বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চালাতে যে খরচ হয় এবং নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বছরে যে অর্থ লাগে, তা তাদের নিজস্ব তহবিলে জমা রাখা হবে। এছাড়া আপদকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিচালন ব্যয়ের আরও ২৫ শতাংশ অর্থ এসব সংস্থা সংরক্ষণ করতে পারবে। ওই সংস্থার কর্মীদের পেনশন বা প্রভিডেন্ড ফান্ডের অর্থও তারা সংরক্ষণ করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সংস্থাসমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের এবং সেই কারণে উক্ত অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।’

বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান প্রয়োজন। যা বর্তমান সংগৃহীত রাজস্ব দ্বারা মেটানো দুরূহ হওয়ায় সংস্থা সমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বিলটি আনা হয়েছে।’

বিলের ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘ক’দিন পরে আমার অ্যাকাউন্টের টাকা নিয়ে নেবে কি না, সেই ভয়ে আছি। টাকা এখন ব্যাংক থেকে নিয়ে বাসায় নিয়ে যাব কি না, ভাবছি। আমি এটুকু বলতে চাচ্ছি, অর্থমন্ত্রী শিক্ষিত লোক। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। উনার সময়ে পুঁজিবাজারে ১০ হাজার ইনডেক্স উঠেছিল। যখন উনি পরিকল্পনামন্ত্রী। তখনই তিনি বলেছিলেন, ৪ হাজার হওয়ার কথা, কীভাবে ১০ হাজার হলো? উনি জানতেন না? ব্যাংকের মালিক সমিতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী বসেন। কীভাবে হয় এটা? নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠের ক্ষমতা দেখাবেন না। পৃথিবীতে অনেক দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।’

বিএনপির ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আর্থিক খাতে লুটপাটের কারণে এখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর অর্থের দিকে চোখ পড়েছে সরকারের। সরকার রাজস্ব থেকে কেন উন্নয়ন করতে পারে না? শেয়ার বাজার লুট, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপ, প্রকল্পের নামে সীমাহীন লুটপাট হচ্ছে। টাকা ব্যাংকে আছে। সেই টাকা নিয়ে নিলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ব্যাংকের হাতে টাকা থাকবে না। সরকারের এখন চোখ গেছে এসব প্রতিষ্ঠানের দিকে।’

অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে রুমিন বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সাধারণ অবস্থা থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। উনি অর্থনীতি বোঝেন না, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তাহলে সমস্যটা কোথায়? উনার সদিচ্ছার অভাব। এত মেধাবী তিনি কিন্তু শেয়ার বাজার, খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছু করলেন না। কেন মেধাবী অর্থমন্ত্রী এদিকে নজর দিচ্ছেন না। উনি ধনী সমাজের জন্য অর্থমন্ত্রী হন নাই। কেন খেটে খাওয়া মানুষের দিকে উনার নজর নেই?’

বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাব দিতে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এত বক্তৃতা শুনতে ভালো লাগে নাই। আপনারা একসময় দায়িত্বে ছিলেন, কী কাজ করেছেন? পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে, জানা দরকার। বাংলাদেশ অন্য দেশের কাছে দৃষ্টান্ত। আপনারা বলছেন, ব্যাংক, শেয়ারবাজার সব খালি করে ফেলেছি। আপনাদের সময় পুঁজিবাজার কী ছিল? আপনাদের সময় ইনডেক্স কী ছিল? এবার সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।’

বিলের বিরোধিতাকারী উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য এক। পিছিয়ে পড়ে থাকা মানুষকে মূল স্রোতে নিয়ে আসা। যত বড় ব্যবসায়ী তত বেশি ট্যাক্স দিচ্ছে। আইন সেভাবেই সাজানো। এ ধরনের আইন নতুন নয়। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন দশম সংসদে পাস হয়েছে। সেখানে এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ সংসদে উদ্ভিদের জাত সংরক্ষণ আইনে একই ধরনের কথা বলা হয়েছে। সরকারের কোষাগারে অর্থ জমা না পড়লে শৃঙ্খলা আসবে না। টাকা পাচারের সংখ্যা কি বলতে পারছি? তাহলে জানি কিভাবে? আমি কি পার্টনার? তাহলে তো হয় অভিযোগ করতে হবে, না হলে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে। এই মুহূর্তে কতজন ব্যাংকার, কর্মকর্তা জেলে আছে, জানা দরকার। যারা অন্যায় করেছে বিচারে নিয়ে যাব।’

২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজার মোটামুটি স্থিতিশীল আছে দাবি করেই অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার আরও ভালো করা উচিত। যে জায়গায় থাকা উচিত, সেখানে নেই।’

Comment here