দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন গ্রাহক ১৯ কোটি ছাড়িয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এটি মূলত সচল সিমের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে দেশে মোবাইল গ্রাহকের হার মোট জনসংখ্যার ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার জরিপ-২০২৩ অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যবহার করে। ভিন্ন ভিন্ন জরিপে ভিন্ন ফলাফলের কারণে দেশে মোবাইল গ্রাহকের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। একই চিত্র ইন্টারনেট গ্রাহক নিয়েও। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিসংখ্যান ভিন্ন না হয়ে প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ হওয়া জরুরি।

বিটিআরসির হিসাব বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশে মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৯ কোটি ৮ লাখ। ওই বছরের গড় হিসাবে দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক ১৮ কোটি ৬৫ লাখ। তবে বিবিএসের সাম্প্রতিক হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে মোবাইল ব্যবহারকারী মোট জনসংখ্যার ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে যা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫৯ লাখ। আবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার জরিপ বলছে, দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

একইভাবে বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৮৪ লাখ। আর ওই বছরে গড়ে ১১ কোটি ৬৮ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল। তবে বিবিএসের হিসাবে ২০২৩ সালে দেশে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৫০ দশমিক ১ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে যা ৮ কোটি ৫০ লাখ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহার জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রায় ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত আইসিটি জরিপটি তিন মাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর প্রকৃত চিত্র প্রকাশ হওয়া জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বিএম মইনুল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিভ্রান্তি এড়াতে দেশে সব সংস্থার সমন্বয়ে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটি পরিসংখ্যান থাকা উচিত। তবে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার ক্ষেত্রে বিবিএসের পরিসংখ্যানকে ভিত্তি হিসেবে ধরা যায়। কারণ, বিটিআরসি তিন মাসে যে একবার মোবাইল ফোনের সিম সচল করেছেন, তাকেই গ্রাহক ধরে। এ ছাড়া মেথোডলজির কারণেও পরিসংখ্যানের ফলাফল ভিন্ন হতে পারে।’

বিটিআরসি বলছে, মোবাইল ফোন গ্রাহকের যে সংখ্যাটি তারা প্রকাশ করে সেটি মূলত সিম (গ্রাহক শনাক্তকরণ নম্বর) সংখ্যা। এ প্রক্রিয়ায় কোনো গ্রাহক সর্বশেষ ৯০ দিনের মধ্যে একবার ব্যবহার করলে তাকে সক্রিয় গ্রাহক গণ্য করা হয়। তাদের ওয়েবসাইটে এই সংখ্যা মোবাইল গ্রাহক শিরোনামে প্রকাশ করা হয়। আবার বর্তমানে একাধিক সিম এবং ডিভাইস ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যাও কম নয়। ফলে বিটিআরসির এই হিসাব দিয়ে দেশের প্রকৃত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা জানা সম্ভব হয় না।

বিটিআরসির সচিব মো. নূরুল হাফিজ আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিটিআরসি মূলত সচল সিমের হিসাবটি প্রকাশ করে। তবে দেশে একক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটির বেশি।’ এই হিসাবটি মূলত বিবিএসের আইসিটি ব্যবহার জরিপ ২০২৩-এর তথ্য বলে জানান তিনি।

দেশে একক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা জানা যায় মোবাইল অপারেটরদের বৈশি^ক সংগঠন জিএসএমের এক প্রতিবেদন থেকে। ‘এচিভিং মোবাইল এনাবলড ডিজিটাল ইনক্লুশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ২০২১ সালের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে একক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি। তবে বর্তমানে এই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে দাবি খাতসংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, দেশের ৫৮ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মোবাইল অপারেটরগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে ৫৮ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এদের মধ্যে আবার ৬০ শতাংশই ফিচার ফোন ব্যবহারকারী।’

ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে, মোবাইল উৎপাদন কমেছে দেশে গত মাসে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার। তবে গত তিন মাসে মোবাইল ফোন উৎপাদন কমেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে তিন মাসে স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মোবাইল ফোন কম উৎপাদন হয়েছে। এতে দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন ২০ লাখের নিচে নেমে গেছে। এর মধ্যে বেশি কমেছে স্মার্ট ফোনের উৎপাদন। বিটিআরসির হিসাবে জানুয়ারি মাসে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৬৩ লাখ। ফেব্রুয়ারি মাসে তা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজারে। সে হিসাবে ইন্টারনেটে এক মাসের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার।

মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক বাড়লেও আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেটের গ্রাহক অপরিবর্তিত রয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে যার সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার। গত ডিসেম্বর মাস থেকে আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা একই রয়েছে।

Comment here