ধর্ষকদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়ার দাবি সংসদে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

ধর্ষকদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়ার দাবি সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বছর বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫ হাজার ৪শ জন। এর মধ্যে শিশু ১৮৫ জন। ধর্ষণের সময় মৃত্যু হয়েছে ২৬ নারীর। এ ছাড়া ধর্ষণের পরে ১৮৩১ জনের। ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছে ১৪ জন শিশু। দেশে ধর্ষণ মহামারী আকার ধারণ করেছে। ক্রমাগত ধর্ষণ কমাতে ধর্ষকদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়ার দাবি উঠেছে একাদশ জাতীয় সংসদে।

বছরের শুরুতে সংসদ অধিবেশনের এ দাবিতে একজোট হয়েছেন সরকারি ও বিরোধীদলীয় সাংসদরা। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি টুপি মাথায় দিয়ে আল্লাহকে হাজির-নাজির করে বলছি এদের ক্রসফায়ারে দিলে কোনো পাপ হবে না বরং বেহেশতে যাওয়া যাবে।’

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন সদস্যরা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদের বৈঠকে বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ড, প্রয়োজনে ক্রসফায়ারের দাবি জানান তিনি।

চুন্নু বলেন, ‘ধর্ষণ প্রতিরোধে অধিবেশনের কোনো একদিন আলোচনার জন্য দুই ঘণ্টা নির্ধারণ করা হোক। এ বিষয়ে যদি আজ আমরা গুরুত্ব না দেই তাহলে জাতির সামনে আমরা কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না। কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হলো। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি ব্যবস্থায় ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের বিষয়টি জনগণ এখনো বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না। এ ঘটনার পরেই সাভারে একজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ধামরাইতেও একই ঘটনা ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রিয় নেতা এরশাদ সরকারের আমলে এসিড সন্ত্রাস খুব বেড়ে গিয়েছিল। তিনি ও তার সরকার উদ্যোগ নিয়ে প্রতিরোধের জন্য এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করেছিলেন । আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, এখন ধর্ষণ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আমার মনে হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এই ধর্ষণ থামানো যাবে না। সময় এসেছে চিন্তাভাবনা করার। ধর্ষণে দায়ী ব্যক্তিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যবস্থা না করে মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা করা হোক।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে চুন্নু বলেন, ‘আপনার মন্ত্রণালয় এত ক্রসফায়ার দিচ্ছে, বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারা যায়, ধর্ষণের মত একটি জঘন্য অপরাধে আজও একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল না! এ বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। ক্রসফায়ার ছাড়া কোনোক্রমেই এটি বন্ধ করা যাবে না।’ ধর্ষণে দায়ী ব্যক্তিদের সাজার বিষয়টি পত্রিকায় ভালোভাবে ছাপানোর দাবি জানান তিনি।

চুন্নু ছাড়া ধর্ষণের বিষয়টিতে আলোচনা করেন কাজী ফিরোজ রশীদ, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ আরও কয়েকজন সাংসদ।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সম্প্রতি ধর্ষণ মহামারী রূপ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, শিশু, নারী, শ্রমিক, প্রতিবন্ধীরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অর্থাৎ কেউ এদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন, সেই ধর্ষণের কোনো ক্লু ছিল না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধীকে ধরতে পেরেছে। এজন্য আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি দাবি করে বলেন, ধর্ষকদের যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন এই দেশের মানুষ মনে রাখে। কিন্তু বিচার যখন শেষ হয় তখন মানুষ সেটা মনে রাখতে পারে না। কারণ ১০ থেকে ১৫ বছর পর এই ধর্ষণের বিচার হয়।’

সংসদের আলোচিত শারমিন ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ দেন ফিরোজ। তিনি বলেন, ‘এর বিচার পেতে ১৬ বছর লেগেছে। তার পিতা এ দেশের স্বনামধন্য একজন শিল্পপতি। তাকে এই ধর্ষণ ও হত্যার বিচার নিয়ে কোর্টকাচারি করতে করতে ১৬ বছর লেগে গেছে। খরচ হয়েছে ৪ কোটি টাকা। ফাঁসি হয়েছে মাত্র একজনের। এসব ঘটনা ঘটছে এর কোনো সাক্ষী নেই। তাহলে এর কি বিচার করবেন? পুলিশ তাদের ধরবে। কিন্তু কোন সাক্ষী থাকবেন না। আমাদের এই সংসদ সার্বভৌম। আমাদের এই সংসদ স্বাধীন। আমাদের বলতে বাধা নেই কিন্তু কিছু মানবাধিকার সংগঠন বলে আইনের শাসন দরকার। কিন্তু এই ধর্ষকদের বিচার আপনারা কি আইনে করবেন? তাদের জেল হবে না? ফাঁসি হবে না? এক বছর পর তারা বেরিয়ে যাবেন। কেউ খবর রাখবেন না। একমাত্র এই মুহূর্তে যদি এই সমাজকে ধর্ষণমুক্ত করতে চান- তাহলে এনকাউন্টার বা তাকে গুলি করে মারতে হবে।’

ফিরোজ আরও বলেন, ‘এ পর্যন্ত ২৮৪ জনকে গুলি করে মারা হয়েছে। এরা মাদকের আসামি। পরশুদিনও একজনকে মারা হয়েছে। কোন আইনে মারা হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষিত হল সারা জীবনের জন্য সে কারও কাছে মুখ দেখাতে পারবে না। কোর্টে গিয়ে কি হবে? কোনো সাক্ষী নেই। অথচ এই মেয়েকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাকে বলতে হবে কিভাবে কি ঘটনা ঘটেছে। এর চাইতে লজ্জাজনক ঘটনা আর কিছু নেই। আর সারাজীবন তাকে এই লজ্জা বয়ে বেড়াতে হবে। আমি এই মানবাধিকারকর্মীদের বলব আপনারা যদি ধর্ষণের শিকার হতেন, আপনাদের মা-বোন যদি ধর্ষণের শিকার হতো? ঘাটাইলের ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পুলিশ সেই দিন যদি ধর্ষণকারীদের পাঁচজনকে গুলি করে মধুপুরে নিয়ে মারা হতো তাহলে পরবর্তী সময়ে আবার ওই বাসে ধর্ষণ ঘটনা ঘটতো না।’

কাজী ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, ‘এখন থেকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করছে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ধর্ষণকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া হোক জিজ্ঞাসাবাদের নামে। তাকে নিয়ে ওখানে গুলি করে মারুক। তারা দেখুক সেখানে তার লাশ পড়ে আছে। যদি এদের বিচার করতে পারি বিচার মনে এনকাউন্টারে মেরে ফেলা হোক। ধর্ষকদের স্বীকারোক্তি নিয়ে ওদেরকে সেখানেই মেরে ফেলা হোক। নতুবা এটা বন্ধ হবে না।’

সরকার দলীয় সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ভারতে একবার বাসে এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। পরে সেখানে ওই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার করে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হয়। তারপর ভারতে ধর্ষণের ঘটনা কমে যায়। আমাদের নাতি-নাতনি আছে। যাদের নিয়ে আমরা প্রতিদিন চলি। এটা হতে পারে না। প্রথমত, এখানে আইনমন্ত্রী আছেন। তিনি এ বিষয়ে কঠোর আইন করবেন। আর দ্বিতীয়ত, যারা এ কাজ করেছেন তাদের এই পৃথিবীতে থাকার কোনো অধিকার নেই। এজন্য আমি চুন্নুর প্রস্তাবকে সমর্থন করি।

Comment here