মঈন আব্দুল্লাহ : পরীমনি একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করেই গেলেন…এমনকি করেও যাচ্ছেন। কিন্তু দর্শক পাচ্ছেন না। ভবিষ্যতে পাবেন কিনা সেটা বলাও যাচ্ছে না। তার পরও চেষ্টা করতে দোষ কোথায়। সেটাই করে যাচ্ছেন পরীমনি। মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু পরী আলোচনায় ছিলেন। বিশেষ করে প্রতিবছর নিজের জন্মদিন জমকালো পরিসরে পালন করে আলোচনা তৈরি করতেন। কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রেও আলোচনা সৃষ্টি করেছেন এই নায়িকা। কিন্তু এসব আলোচনা আসলে কীসের জন্য।
যে অভিনয় জগতে আপনি এসেছেন। আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিজের অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন জয় করা। ভক্তের ভালোবাসায় আজীবন বেঁচে থাকা। আসল উদ্দেশ্য রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা তৈরির জন্য উদ্ভট পথ বেছে নিচ্ছেন হালের পরীমনি। মাদকের ছোবলে নিজেকে সঁপে দিলেন আবার উদ্ধারও পেলেন। সঙ্গে নিয়ে এলেন নতুন কিছু ভালোবাসার মানুষ। যারা আগেও ছিল। কিন্তু সঠিক পথটা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেই বিপদের সময় পার হওয়ার পরও একই মুখের ভিড়ে হারিয়ে গেলেন পরী। শুধু আলোচনায় থাকল তার নতুন লুঙ্গি ড্যান্স।
যাক পরীর কথা এত বাড়িয়ে লাভ নেই। কারণ সবাই মনে করেন যার যেমন ইচ্ছা সে তেমনই চলবেন। তবে আপনি যদি নিজেকে তারকা মনে করেন তা হলেই বিপদ। আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। ভক্ত তৈরি করতে হবে। অবশ্যই সেটি অভিনয় দিয়ে। বিতর্কিত কাজ করে লাখ লাখ ফলোয়ার দিয়ে আজীবন তারকা থাকা যায় না। গত কয়েক বছর ধরেই দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা খুবই নাজুক। ছবি মুক্তি কমে শূন্যের কোঠায়। করোনা এসে সেই শোচনীয় অবস্থাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে গেছে। সেখান থেকে উত্তরণের নানা পথ খুঁজছে চলচ্চিত্রের মানুষরা। কিন্তু সেই সোনায় মোড়ানো পথ এখনো খুঁজে পাচ্ছে না তারা। করোনা কিছুটা কমেছে। সিনেমা হল খুলেছে। ছবিও মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু পরীর কি কোনো নতুন ছবি আছে, যা মুক্তি দিয়ে সিনেমা হলে হারানো দর্শক ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
এ প্রশ্নের উত্তর একটাই। নেই। তা হলে কীসের এত দাম্ভিকতা! যে ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এত দাপাদাপি। সেই জায়গাটাই তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দখল করে নিচ্ছে জেমস বন্ড সিরিজ। একের পর এক বিদেশি ছবি শোভা পাচ্ছে সিনেপ্লেক্সগুলোর পর্দায়। আর মুক্তি পাচ্ছে ‘পদ্মাপুরাণ’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’, ‘ঢাকা ড্রিম’ ছবি। এসব ছবি কখনই দর্শক টানতে পারেনি। এগুলো বোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়াবে। বিভিন্ন উৎসবে যাবে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। কিন্তু সবাই চায় এমন ছবি দর্শক দেখুক। আসলে বাস্তবতা মানতেই হবে। জীবনের গল্প বলে যাওয়া প্যারালাল সিনেমা কখনই সিনেমা হলে পর্দা কাঁপিয়ে দেবে না। আর সেই গল্প দেখার জন্য মানুষও হুমড়ি খেয়ে পড়বে না। সবার এখন চিন্তা করতে হবে অন্যরকম। কলকাতার বস্তাপচা সিনেমাও দর্শক আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সামনে কলকাতার ছবি আরও আসবে। কিন্তু সিনেমা হল মালিকদের আশা পূরণ হবে না।
তারা যে স্বপ্ন দেখছেন তাদেরকে বলি, পারলে আমদানি করুন হলিউড, বলিউডের তরতাজা সিনেমা। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে আমাদের প্রেক্ষাগৃহেও। তা হলেই হয়তো নতুন গড়ে ওঠা সিনেপ্লেক্সগুলো ভরে উঠবে দর্শকে। সিনেমা হলের কথা চিন্তা করে এফডিসি কেন্দ্রিক নির্মাতারা ছুটছেন শাপলা মিডিয়ার পেছনে। তারা কম বাজেটের বেশ কিছু সিনেমা নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমজমাট বলা চলে এফডিসির সবখানেই। পাশাপাশি অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীও পেয়েছেন কাজের মাঠ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ছবি কি এখন মানুষ দেখবে? কয়েক বছর আগেও দর্শক শাকিব খান-অপু বিশ^াস জুটির বস্তাপচা কাহিনির ছবিগুলো দেদার গিলেছে। এখন সেই সময় নেই। দর্শক সেই চিল্লাপাল্লা দেখার জন্য সিনেমা হলে যায় না। সে সব ছবির যুগও শেষ। তা হলে কী করতে হবে? সেই পথ বাতলে দেওয়ার মতো কেউ হাজির হবে না। নিজেদের পথ নিজেই তৈরি করতে হবে। তার একটু ছিটেফোঁটা চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এ সময়ের তরুণ কিছু নির্মাতার চোখে-মুখে। তারই ফসল ‘চোখ’, ‘পদ্মাপুরাণ’, ‘চন্দ্রাবতী কথা’, ‘ঢাকা ড্রিম’ ছবিগুলো। কিন্তু ছবি যদি সিনেমার মতো না হয় তা হলে কীভাবে সম্ভব!
যখন দেখি একই সিনেপ্লেক্সের পাশাপাশি হলে জেমস বন্ড ও বাংলা ছবি চলছে। তখন আধুনিক দর্শক বন্ডকে দেখতেই তো ঢুকবে। এটাই স্বাভাবিক। তার পরও আমাদের তরুণরা চেষ্টা করছে। কিছু দর্শক পাচ্ছে। তবে চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে হলে বাণিজ্যিক, মানে সুপার কমার্শিয়াল মুভির দিকেই হাঁটতে হবে। কল্পনারও বেশি কিছু চায় সবাই। হলে বসে স্বপ্নকেও অতিক্রম করতে চায় মানুষ। সেটি করতে পারছে বলেই আধুনিক পৃথিবীতে বলিউড ও হলিউড এখনো ব্যবসা করে যাচ্ছে। সামনে আরও করবে।
Comment here