পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়

জিয়াউল গনি সেলিম,রাজশাহী ব্যুরো : ঘন কুয়াশা, নিয়মিত যান্ত্রিক ক্রুটিসহ নানা কারণে ভেঙে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলের আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনের সিডিউল। নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর গন্তব্যে পৌঁছাছে বেশিরভাগ ট্রেন। শুধুমাত্র জয়দেবপুর থেকে কমলাপুর পৌঁছতেই দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। জরুরি কাজেও ঢাকা পৌঁছতে পারছেন না অনেকে।

বিশেষ করে ঢাকা-জয়দেবপুর রুট ট্রেনের যাত্রীদের কাছে ভোগান্তির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেলের তথ্য বলছে, এই রুটে সিঙ্গেল লাইন থাকার কারণে ট্রেনগুলো ক্রসিংয়ে পড়ে। ফলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ও ঢাকামুখী সকল ট্রেনের জট বাধে এখানে। একেকটি ট্রেনকে ক্রসিং দিতে গিয়ে ৩০ মিনিট থেকে একঘণ্টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ট্রেনকে।

এক যুগ আগে ঢাকায় ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৪০ কিলোমিটার। কিন্তু বর্তমানে তা কমিয়ে ২৬ থেকে ৩২ কিলোমিটার করা হয়েছে। এমন অবস্থা পুরো রেলপথেই। গতি এভাবে কমে যাওয়ার মূল কারণ লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না হওয়া, সেতুগুলোর জীর্ণদশা এবং রেল লাইনের পাথর সরে যাওয়া বা না থাকা, স্টেশন বন্ধ থাকা এবং দক্ষ চালক ও গার্ড স্বল্পতা।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১০ বছরে ৮০টির বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অথচ ট্রেনের গতি বাড়ছে না। ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতির অত্যাধুনিক কোচ মাত্র ৬০ কিলোমিটার গতি নিয়ে চলছে। উন্নয়নের গতির সঙ্গে ট্রেনের গতির সঙ্গতি নেই।

অন্যদিকে, লাইনের সক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি ট্রেন চলছে। এতে লাইনচ্যুতিসহ বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘটছে ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১১ বছরে যাত্রী পরিবহন বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। একই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ ১ হাজার ৬৫৮ শতাংশ বেড়েছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও চীন থেকে প্রায় ৪০০ অত্যাধুনিক যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ করা হয়েছে। ৯৫টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় রোধ করা যাচ্ছে না।

রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় বছরের পর বছর ধরে চলছে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী অধিকাংশ ট্রেন দুই থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। এটি এখন নিয়মিত ব্যাপার। ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলে চলা বনলতা এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস, রাজশাহী এক্সপ্রেস, টাঙ্গাইল এক্সপ্রেস ট্রেনের সিডিউল মেনে চালানো যাচ্ছে না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার আমাদের সময়কে বলেন, বন্ধ স্টেশন এলাকায় ১০-১৫ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। সিঙ্গেল লাইন ও অতিরিক্ত ট্রেনের কারণে একটি ট্রেন দাঁড় করিয়ে অন্য একটি ট্রেনকে পাস দিতে হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর সিঙ্গেল লাইন দিয়ে ট্রেন চালাতে গিয়ে একেকটি ট্রেন আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, ‘সেতুর উভয় পাশে পুরো ট্রেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। শীতের সময় ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেনের গতি কমাতে হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী ট্রেনগুলো বিলম্বে চলাচল করছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সিডিউল বিপর্যয় কমিয়ে আনতে।’

 

Comment here