আবু আলী : ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ব্যাঙ্গালুরুর কৃষকদের চাপের মুখে দেশটির সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পর বাজারে বড় ধরনের ধস নামে। সর্বকালের সবচেয়ে কম দামে দেশটিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। ব্যাঙ্গালুরু প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬ থেকে ১০ রুপিতে বিক্রি হয়। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দেশটির কৃষকরা পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাপ দেয়। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। খবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রের।
কয়েক মাস আগে দেশে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এর পর ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য দাম বাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফা পেঁয়াজের দাম বাড়ে। ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকে। গত এক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি। উল্লেখ্য, ভারতে পেঁয়াজ আমদানি বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত সরকার। গত ২৮ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার এক আদেশে এ অনুমতি দেওয়া হয়। আদেশে শুধু কর্ণাটক রাজ্যে উৎপাদিত ‘ব্যাঙ্গালুর গোলাপি পেঁয়াজ’ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ভারতের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ অবস্থায় পেঁয়াজ আটকে রাখতে পারবে না। কারণ এটি পচনশীল পণ্য। ভারতের এমন সিদ্ধান্তে শিগগির বাংলাদেশের পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।
ভারতের আদেশে বলা হয়, প্রতি চালানে সর্বোচ্চ ৯ হাজার টন পর্যন্ত রপ্তানি করা যাবে। এ পেঁয়াজ ভারতের হর্টিকালচার কমিশনারের অনুমতি নিয়ে চেন্নাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে হবে। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে।
একটি রাজ্য থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির আদেশে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভারতের অন্য অঞ্চলের কৃষকরা। বিশেষ করে এশিয়ার পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় বাজার লাসাগাঁওয়ের কৃষকরা এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে।
আমদানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ বেশি বিক্রি হয় নাসিক জাতের; যা উৎপাদন হয় মহারাষ্ট্রে। এ ছাড়া সুখসাগর, পাটনা, সাউথ জাতের পেঁয়াজও বিক্রি হয়।
ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণায় পেঁয়াজের দাম দু-চার দিনের মধ্যে কমে আসবে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। অনলাইনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় ভারতের বৃহত্তম বাজার লাসগাঁওয়ে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৬ থেকে ১০ টাকায় নেমে এসেছে।
এদিকে ভারতের পাশাপাশি মিসর ও তুরস্ক থেকে প্রায় ৬০ টন পেঁয়াজ নিয়ে তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের পথে রয়েছে। দেশের তিনটি বড় কোম্পানির আমদানি করা পেঁয়াজ এখন পথে। দু-এক দিনের মধ্যে বন্দরে জাহাজ ভিড়বে।
অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় আগাম জাতের যে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় দেশে, সেটিও চলতি মাসে বাজারে চলে আসবে। ফলে পেঁয়াজ মজুদ রেখে কেউ যদি বেশি দাম পাওয়ার অনৈতিক চেষ্টা করে, তবে সেই ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সূত্র জানিয়েছে, সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন এবং সুদের হার হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ছাড়া স্থল ও নৌ বন্দরগুলোয় আমদানি করা পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়।
এলসির ৩৫শ টন পেঁয়াজ আসবে শিগগিরই
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ৩ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা করে। ৩ দিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। সেপ্টেম্বরে এলসি করা ৩৫শ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করতে পারে। ভারত গতকাল পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে খুব শিগগিরই দাম স্বাভাবিক হতে পারে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আগে খোলা এলসিতে এক হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করে ভারত। বাকি পেঁয়াজ দুর্গাপূজার ছুটি শেষে রপ্তানির কথা বললেও শুধু তার নামের ৫১ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করে। হিলি বন্দর দিয়ে বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানি একেবারে বন্ধ। এখনো হিলির অনেক আমদানিকারকের সেপ্টেম্বর মাসের প্রায় ৩৫শ টন পেঁয়াজের এলসি রয়েছে। সেগুলোর বিপরীতে হয়তো পেঁয়াজ দেবে ভারত। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
Comment here