পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত এ বছরেই - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত এ বছরেই

দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি এ বছরই চূড়ান্ত করবে সরকার। এ লক্ষ্যে মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে আগামী পহেলা অক্টোবর ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবে সরকার। সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বৈঠকে ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করা হবে। এতে শ্রমিক পক্ষে বাস্তবসম্মত সুযোগ-সুবিধার দাবি উত্থাপন করা হবে। এর মধ্যে শ্রমিকদের চাকরি শেষে যাতে খালি হাতে চলে যেতে না হয়, সেজন্য গ্রাচ্যুইটির প্রবর্তন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাসের বদলে ৬ মাস প্রস্তাব থাকছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ভোগ্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়-ওষুধ, পরিবহন ভাড়াসহ সব কিছুর খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে শ্রমিকরা যে ভাতা পায়, তাতে সংসার চলে না। বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করা হবে বলে জানান শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয় পোশাক শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি

সিরাজুল ইসলাম রনি। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করা হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধাগুলোও বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হবে। বিশেষ করে শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় ১০-১৫ বছর চাকরি করার পর তাকে খালি হাতে চলে যেতে হয়। তাদের খালি হাতে যাতে চলে যেতে না হয়, সেজন্য গ্রাচ্যুইটির বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সিরাজুল ইসলাম রনি আরও বলেন, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ২২ হাজার, ২৩ হাজার ও ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি তোলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয়ের জন্য নতুন মজুরি বোর্ড গঠন করে বাংলাদেশ জাতীয় পোশাক শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমানকে যথাক্রমে শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা চার স্থায়ী সদস্য বিশিষ্ট মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বোর্ডের অন্য স্থায়ী সদস্যরা হলেনÑ বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের প্রতিনিধি মকসুদ বেলাল সিদ্দিকী, শ্রমিক প্রতিনিধি ও জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতা সুলতান আহমেদ এবং স্বতন্ত্র সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন।

২০১৮ সালে গৃহীত সর্বশেষ মজুরি নির্ধারণের পাঁচ বছর পর সরকার শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি হিসেবে একজন নতুন শ্রমিকের জন্য ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এতে মূল বেতন হিসেবে ৪ হাজার ১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া হিসেবে ২ হাজার ৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা হিসেবে ৬০০ টাকা, পরিবহন ভাতা হিসেবে ৩৫০ টাকা ও খাদ্য ভাতা হিসেবে ৯০০ টাকা ধরা হয়েছিল।

তবে বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী শ্রমিক নেতারা এখন ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা ও ৬৫ শতাংশ মূল বেতন বৃদ্ধির দাবি করছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে নতুন শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি হিসেবে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর দাবিও করছেন তারা। তারা গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি কাঠামোর সর্বনিম্ন সপ্তম গ্রেডের জন্য মূল বেতনের ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধিরও দাবি করেন।

জানা গেছে, পোশাক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্যপরিষদ পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক বেতন ২৩ হাজার টাকার দাবি করেছে। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার ন্যূনতম মাসিক বেতন ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি করার দাবি করেছেন। এছাড়া সর্বনিম্ন মাসিক মজুরি ২৪ হাজার টাকা দাবি করেছে গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট।

প্রসঙ্গত, সরকার ২০০৬ সাল থেকে চারবার পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে। তবে প্রতিবার ভাতা বাড়ানোর নামে মূল মজুরি হ্রাস পেয়েছে।

Comment here