প্রতীক নিয়ে প্রচারের মাঠে প্রার্থীরা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

প্রতীক নিয়ে প্রচারের মাঠে প্রার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। গতকাল শুক্রবার গণসংযোগের প্রথম দিন উৎসবমুখর পরিবেশে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়িয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাদের পদচারণায় নগরীর সর্বত্র ভোটের ডামাডোল বেজে উঠেছে। পুরো শহর মিছিলে মুখর ছিল। সবাই যার যার প্রতীক নিয়ে গেছে ভোটারের দ্বারে দ্বারে। প্রচারের সময় আওয়ামী লীগ মেয়রপ্রার্থীরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চেয়েছেন। বিএনপির মেয়রপ্রার্থীরা সুষ্ঠু ভোট এবং সমান সুযোগ চেয়ে বলেছেন, তাদের নির্বাচন আন্দোলনেরই অংশ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং তাবিথ আউয়াল উত্তরা থেকে প্রচার শুরু করেছেন। নৌকার প্রার্থী আতিকুল উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজ পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের কাছে ভোট চান।

তাবিথের শুরুটা ছিল অন্যরকম। কর্মী-সমর্থকদের প্রায় আধাঘণ্টার উত্তাল মিছিলে শুরু হয়েছে তার প্রচার। উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদের সামনে থেকে জুমার নামাজের পর তার নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস প্রথম পথসভার মধ্য দিয়ে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন। তার প্রচারে ব্যাপক জনসমাগম হয়। সেøাগানে সেøাগানে পুরো এলাকা

মুখর করে তোলেন নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর বাবার কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের।

১৮ দিনের প্রচার শেষে ৩০ জানুয়ারি হবে ভোটগ্রহণ। দুই সিটিতে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ মিলিয়ে মোট ৭৫৮ প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে আছেন এবার।

ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউনের ই-হক স্কুলের সামনে পথসভায় জনগণের কাছে গিয়ে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ৩০ জানুয়ারি বিজয়কে সুনিশ্চিত করে প্রাণপ্রিয় ঢাকাকে ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা গড়ব।

জুমার পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে উত্তর গেটে সাংবাদিকদের সামনে ইশরাক দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেন, খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করছি, তারই অংশ এই নির্বাচন।

মেয়র পদে দুই সিটির ১৩ প্রার্থীর সবাই ইসিতে নিবন্ধিত দলের মনোনীত হওয়ায় যার যার দলীয় প্রতীক নিয়েই তারা লড়বেন। কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের মধ্যে ইসিতে নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা থেকে বরাদ্দ করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ চাইলেন আতিক : ঢাকা উত্তরের সদ্যবিদায়ী মেয়র প্রচারের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ শহর দরকার। আমি নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে চাই। এ শহরকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি বলেন, আমি কাজপাগল, আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এই শহরকে গড়ে তুলব। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটি কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু নির্মূল করতে চাই।

নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আতিক বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারপরও বলব, যারা এমপি-মন্ত্রী তারাও দলের অংশ। কিন্তু তারা কাজ করতে পারছেন না। অন্যদিকে মওদুদ আহমদসহ বিএনপি নেতারা প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তারা সাবেক এমপি ও মন্ত্রী; বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নেই, নৌকার শুধু উন্নয়নের গিয়ার আছে। নৌকার গিয়ার একটাই-ফ্রন্ট গিয়ার।

নিজের বয়স নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমার প্রতিপক্ষ নাকি বলেছে আমার তো বয়স হয়ে গেছে। আমি বলতে চাইÑ বয়সের চেয়ে বড় হচ্ছে মাথার ভেতরে বয়স কত রয়েছে। আমি মনে করি, আমার প্রতিপক্ষ থেকে আমার সেই মাথার বয়স বেশি আছে, সাহস আছে। আমার মাথার যে বয়স আছে, সেই বয়স দিয়ে আমার প্রতিপক্ষকে আরও ৫০ বছর বেশি সামনের দিকে নিতে পারব।

আতিকুল বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি মেয়রসহ সব কাউন্সিলরের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করবেন। একই সঙ্গে নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ শহর গড়ে তোলার জন্য প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রতিপক্ষকে কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নের জবাবে আতিকুল বলেন, আমাদের চাচা-ভাতিজার সম্পর্ক। প্রতিপক্ষের বাবা একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। যে কোনো প্রতিপক্ষকেই আমরা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বলে মনে করি। কাউকেই ছোট করে দেখব না।

সরকার ও ইসিকে জনগণের আওয়াজ শুনতে বললেন তাবিথ : সকালে প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর তাবিথ আউয়াল তার নির্বাচনী এলাকা রাজধানীর উত্তর প্রান্ত থেকে প্রচার শুরু করেন। এতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক অংশ নেন। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পর পরই কর্মী ও সমর্থকরা মসজিদের সামনে একযোগে মিছিল শুরু করেন। এ সময় কর্মী ও সমর্থকদের ভিড় ও চাপাচাপিতে তাবিথ আউয়ালসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা হিমশিম খান। পরে মসজিদের পাশে সড়কের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

তাবিথ আউয়াল বলেন, আশা করি, নির্বাচন কমিশন এই উত্তাল জনগণের আওয়াজ শুনবেন এবং সে অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অবশ্যই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার যাত্রা শুরু করলাম। সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, গুম, খুন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষ এ নির্বাচনে জবাব দেবে।

সেখান থেকে উত্তরার ১১ নম্বরে প্রচারে যুক্ত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা এ নির্বাচনকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের মুক্তির অংশ হিসেবে নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য তাবিথ আউয়ালকে ভোট দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করবেন।’

এর আগে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর জামে মসজিদের সামনে বক্তব্য দেন উত্তর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করতে হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে। অতীতের মতো এ নির্বাচনেও যদি কোনো কারচুপি ও ষড়যন্ত্র করা হয়, এখান থেকেই সরকার পতনের আন্দোলনের সূচনা হবে।

গতকাল তাবিথ আউয়াল রাত ৭টা পর্যন্ত উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫১, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১০ নম্বর সেক্টরের রানাভোলা, কামারপাড়া, দিয়াবাড়ি, পাকুরিয়া, ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড় হয়ে পরে রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স এলাকায় জনসংযোগ করেন।

সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি তাপসের : জনগণের কাছে গিয়ে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ৩০ জানুয়ারি বিজয়কে সুনিশ্চিত করে প্রাণপ্রিয় ঢাকাকে ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং উন্নত ঢাকা গড়ব। সেই উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আজ থেকে যাত্রা শুরু।

জনগণের কাছে ভোট ও দোয়া প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, আপামর জনগণ সেবক হিসেবে নির্বাচিত করে তাদের সেবার সুযোগ দিয়ে একসঙ্গে এ যাত্রায় শরিক হবেন।

এ সময় কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ৭০ নং ওয়ার্ডের আতিকুর রহমান, ৬৯ ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান হাসু এবং সংরক্ষিত আসনে সেলিনা খানকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পথসভার পর এলাকার অলিতে-গলিতে ঘরে ঘরে ঢুকে, দোকানে দোকানে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করেন তাপস। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া ও নৌকার জন্য ভোট চান তিনি।

এ সময় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের সেøাগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রচারে আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়েন তাপস। ভোটারদের সঙ্গে আলিঙ্গন করেন ও নৌকার লিফলেট দিয়ে ভোট চান।

এর আগে প্রতীক বুঝে পেয়ে তাপস ডেমরা এলাকায় পৌঁছলে সেøাগান ও করতালিতে তাকে স্বাগত জানান স্থায়ী নেতাকর্মী ও জনগণ। পথসভার অস্থায়ী মঞ্চে উঠে তাপস গণসংযোগ উদ্বোধনের আগে স্মরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনকে, যাদের আত্মত্যাগে এসেছে স্বাধীনতা।

‘গণতন্ত্রের মুক্তির’ মিশন ইশরাকের : জুমার পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে সাংবাদিকদের সামনে ইশরাক বলেন, আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাচ্ছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমরা যে আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের মায়ের মুক্তির জন্য যে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছি, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যে আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়েছি তাতে সফলকাম হতে পারি। ধানের শীষে ভোট দেবেন। ইনশাআল্লাহ আমাদের বিজয় আসবে এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করে ছাড়বই।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং ইশরাক হোসেনকে সামনে নিয়ে সেই আন্দোলন শুরু করলাম।

পরে মহাসচিবসহ নেতারা ইশরাকের লিফলেট মানুষের কাছে বিতরণ করেন। মসজিদ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী মিছিল করে ইশরাককে নিয়ে বের হন এবং পথচারীদের কাছে লিফলেট বিতরণ করেন।

Comment here