বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে

তাওহীদুল ইসলাম : চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করছে সরকার। দেশের প্রথম এই সুড়ঙ্গপথের নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। শহরের দুই প্রান্তকে একত্রিত করবে এ টানেল। এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে নির্মাণকাজ। এ পর্যায়ে টানেলের টোল হার নির্ধারণ, অপারেটর নিয়োগের কাজও গুছিয়ে আনছে সেতু বিভাগ। টানেলের অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকেই (সিসিসিসি) ভাবা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর টোল অপারেটর নিয়োগ করা হয় সরাসরি জিটুজি (সরকার-সরকার) পদ্ধতিতে। বঙ্গবন্ধু টানেলের ক্ষেত্রে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করা যায় কিনা তা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। এতে দরপ্রস্তাব যাচাইয়ের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছে সেতু বিভাগ।

কর্ণফুলীতে তিনটি সেতু নির্মিত হলেও তা যানবাহনের চাপ সামলাতে যথেষ্ট নয়। এ জন্য টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকবে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু।

টানেল নির্মাণে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর চীনের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চীন সরকার টানেল নির্মাণের জন্য মনোনীত করে চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিসিসিকে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খননকাজ উদ্বোধন করেন। এটি চালু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাওয়া কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহনকে আর চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতে হবে না। সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। এতে চট্টগ্রাম শহরে যানবাহনের চাপ কমে যাবে।

টানেলের অগ্রগতি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক হারুন অর রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রেখে নির্মাণকাজ চলছে। চেষ্টা করা হচ্ছে আরও আগে শেষ করতে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সব কিছু সামলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে টানেলের কাজ।

২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম টানেল টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ খননকাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর ২ হাজার ৪৫৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর শতভাগ বোরিং কাজ শেষ হয়। বর্তমানে দ্বিতীয় টিউবের ইন্টারনাল স্ট্রাকচার নির্মাণকাজ চলছে। এ টিউবের ২ হাজার ৪৫০ মিটার লেন স্ল্যাবের মধ্যে ১১৭ মিটার ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দুটি টিউবের ৩টি সংযোগপথের মধ্যে একটির কাজ চলছে। সম্পন্ন হয়েছে ৭৭টি হোল ড্রিলিংয়ের কাজ। চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্তে ভায়াডাক্ট নির্মাণ হয়েছে। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ চলছে। টানেল প্রকল্পের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে এক হাজার ৬৫৭ জন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিককে ২৭০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

গত মাসে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) যুগ্ম সচিব মিরানা মাহরুখ প্রকল্প কার্যক্রম পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে বলা হয়- প্রকল্পের আওতায় গৃহীত ঋণের পুরো অর্থ ৬ নভেম্বরের মধ্যে ছাড় করা বাস্তবতার কারণে সম্ভব নয়। কমপক্ষে আরও ৬ মাস বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা দরকার। গত ২৩ ডিসেম্বর ইআরডির মাধ্যমে চীনা এক্সিম ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। জবাবে বলা হয়, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শিডিউলের তুলনায় এগিয়ে আছে। ঋণের প্রাপ্যতার সময় শেষ হওয়ার ১০ মাস বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজ সম্পন্ন করতে বাণিজ্যিক পক্ষকে সর্বাত্মক চেষ্টা করতে অনুরোধ করা হয়। প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করা না গেলে এবং ঋণের প্রাপ্যতার গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর বাণিজ্যিক চুক্তির আওতায় অর্থ পরিশোধ বাকি থাকলে বাংলাদেশ পক্ষকে অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধের অনুরোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেতু বিভাগের প্রস্তাবের ভিত্তিতে প্রকল্পটি শেষ করার স্বার্থে ঠিকাদারকে প্রাপ্য সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধে ৬ মাস মেয়াদ বাড়াতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আবার অনুরোধ করা হয়। তবে ইআরডি এখনো জবাব দেয়নি। এ নিয়ে প্রকল্পকর্তারা জানান, ৬ নভেম্বরের পর ঠিকাদারের ৮ শতাংশ বিল অবশিষ্ট থাকবে।

২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে আসেন। সে সময় চীন ২৭টি প্রকল্পে অর্থায়ন করতে রাজি হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল অন্যতম। প্রকল্পে ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারের।

 

Comment here