বনানীতে কয়েকটি ভবনে ত্রুটি পেয়েছে রাজউকের পরিদর্শক দল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

বনানীতে কয়েকটি ভবনে ত্রুটি পেয়েছে রাজউকের পরিদর্শক দল

রাজধানীর বনানীতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এফ আর টাওয়ারের আশপাশের বহুতল ভবনগুলোর নির্মাণ ও অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ছে। কোনো কোনো ভবন নির্মাণে মানা হয়নি অনুমোদিত নকশা, আবার কোনোটিতে নেই অগ্নিনির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা। কোথাও বা আবাসিক ভবন ব্যবহার করা হচ্ছে বাণিজ্যিক কাজে। ফলে এসব ভবন বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বুধবার রাজউকের পরিদর্শক দল ভবনগুলোতে অভিযান চালিয়ে এসব সমস্যা চিহ্নিত করেছে।

রাজউকের পরিচালক মামুন মিয়ার নেতৃত্বে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের বেশকিছু ভবন পরিদর্শন করে পরিদর্শক দল। এ সময় কয়েকটি ভবনকে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেন তারা। হোটেল সুইট ড্রিম, ইকবাল সেন্টার, ডেল্টা ডালিয়া ও ব্লু ওশান টাওয়ারে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি পেয়েছেন তারা। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ঠিক করতে ভবন মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিদর্শক দল ২৩ তলাবিশিষ্ট ইকবাল টাওয়ারে গিয়ে ভবনটির নকশা চাইলে মালিকপক্ষ তৎক্ষণিকভাবে ২৩ তলার নকশা দেখাতে পারেনি। এতে পরিদর্শক দলের মনে হয়েছে, ভবনের নকশা নিয়ে ত্রুটি থাকতে পারে। ২১ তলা ব্লু ওশান টাওয়ার ও ১৬ তলা ডেল্টা ডালিয়া টাওয়ারে গিয়ে পরিদর্শক দলের মনে হয়, ভবন দুটি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী দেখতে পায়নি পরিদর্শক দল। অবশ্য আগে থেকেই ভবন দুটিতে অগ্নিঝুঁকির সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল রাজউক।

এফ আর টাওয়ার-সংলগ্ন কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের আওয়াল টাওয়ারে তেমন কোনো ত্রুটি পায়নি পরিদর্শক দল। রাজউকের পরিচালক (জোন-৪) মামুন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ডেল্টা ডালিয়া ও ব্লু ওশান টওয়ার দুটি আবাসিক অনুমোদন নিয়ে নির্মিত। তবে ভবনের কয়েকটি তলায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া ভবন দুটিতে ফায়ার এক্সিটে ত্রুটিসহ বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ডেল্টা ডালিয়া ভবনটির সিঁড়ির অবস্থা ভালো না। ভবনের নকশায় যে খালি জায়গাটুকু দেখানো হয়েছিল, সেখানে এটিএম বুথ ও দোকান করা হয়েছে। আমরা সেগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। আর আবাসিক অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডেল্টা ডালিয়ার মালিকদের একজন এবি শরিফুদ্দীন বলেন, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। রাজউকের দল কিছু বিষয় যুক্ত করতে বলেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামুন মিয়া বলেন, ব্লু ওশান টাওয়ারের ডানপাশে সিঁড়ি থাকার কথা থাকলেও তা নেই। এ ছাড়া ভবনে ফায়ার এক্সিট সিঁড়ি রয়েছে তৃতীয় তলা পর্যন্ত।

নকশা অনুযায়ী ২১ তলা ব্লু ওশান ভবনটি আবাসিক হলেও এর ২০ ও ২১ তলায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। তবে ব্লু ওশান টাওয়ারের একজন দাবি করেন, নকশা মেনেই তারা ভবন নির্মাণ করেছেন।

ইকবাল সেন্টার সম্পর্কে মামুন মিয়া বলেন, এই ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো ফায়ার এক্সিট নেই। ভবনের সামনে-পেছনে কোনো জায়গা নেই। ২০১৫ সালে তারা ১৮ তলা থেকে ২৩ তলা করার অনুমতি চেয়েছিল। রাজউক সেটা দেয়নি। তারপরও সেখানে ২৩ তলা করা হয়েছে। বাড়তি তলায় একটি মসজিদও বানানো হয়েছে। ভবনটির বর্ধিত অংশ অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ভবনটির মালিক এইচবিএম ইকবালের সহকারী জাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ভবনটি ঝুঁকিমুক্ত। আমরা ফায়ার এক্সিট নির্মাণের কাজ শুরু করছি। আর ভবনের বাড়তি তলা নির্মাণের অনুমতি রাজউক-ই দিয়েছিল।’

রাজউকের পরিদর্শক দল একই সড়কের হোটেল সুইট ড্রিমে যায়। এ ভবনের মালিকরাও রাজউকের নকশা না মেনে অতিরিক্ত তলা নির্মাণ করেছেন বলে জানান রাজউকের পরিচালক মামুন মিয়া। তিনি বলেন, এটাও ১৬ তলার অনুমতি নিয়ে ১৮ তলা করা হয়েছে। ১৬, ১৭, ১৮ তলায় বাঁশ ও কাঠের অস্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করায় ছাদে যাওয়ার পথ প্রায় বন্ধ। ভবনটিতে নকশাবহির্ভূতভাবে একটি এটিএম বুথও স্থাপন করা হয়েছে। মামুন মিয়া জানান, ভবন কর্তৃপক্ষকে এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও ফায়ার এক্সিট নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, বুধবারও রাজউকের ২৪টি দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভবন পরিদর্শন করে। রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, এসব তথ্য একসঙ্গে করে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। কোন ভবনে কী ত্রুটি পাওয়া গেল, সেটা তখন ধরা পড়বে।

Comment here