বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল হাওরের ধান - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল হাওরের ধান

বিন্দু তালুকদার,সুনামগঞ্জ : বোরো ফসল রক্ষায় টানা ১৫ দিন পানি ঠেকানোর চেষ্টা করেছে প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, পিআইসি ও হাওরপাড়ের কৃষকরা। কিন্তু বাঁধের শেষ রক্ষা হয়নি।

আজ রোববার বিকেলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরের ২৭ নম্বর ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যদিও কৃষি বিভাগের দাবি, পানিতে শতাধিক হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

প্রথমে আজ সকাল থেকে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন কান্দা উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করে। পরে বিকেলে হাওরের একটি বাঁধটি ভেঙে তলিয়ে যায় ছোট-বড় কয়েকটি হাওরের পাকা ও আধা পাকা ধান। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে আরও কয়েকটি হাওরের বাঁধ।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় ৪২টি হাওরে এবার দুই লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়েছে। এসব জমির ফসলরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করেছে। নিয়ম অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ হয়নি।

কৃষকদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। গত ২ এপ্রিল সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধটি প্রথম ভেঙে যায়। এরপর ধর্মপাশার চন্দ্রসোনার থাল, দিরাইয়ের চাপতির হাওরসহ জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত ১৫টি হাওরের ৭ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। যদিও প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের দাবি তলিয়ে যাওয়া জমির পরিমাণ ৫ হাজার হেক্টর।

টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালী বাঁধ ভাঙার পর পাশের গুরমার হাওরের বাঁধ ঠেকাতে দিনরাত কাজ করেছেন সবাই। কৃষক, প্রশাসনের কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও পিআইসির লোকজন দিন-রাত বাঁধে কাটিয়েছেন। পানি ঠেকাতে যুদ্ধ করেছেন হাওরের একমাত্র বোরো ফসলরক্ষায়। কিন্তু গত কয়েক দিনে ভারি বর্ষণ ও সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির চাপে রোববার সকাল থেকে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন কান্দা উপচে পানি হাওরে প্রবেশ করে।

গলগলিয়া হাওরের কৃষক শফিক নুর বলেন, ‘গলগলিয়া একটি ছোট হাওর, এখানে প্রায় ৫০-৬০টি কৃষক পরিবার জমি চাষাবাদ করেছিলেন। কিন্তু গুরমার হাওরের একটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে।’

মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক হাবিব মিয়া বলেন, ‘তাহিরপুর উপজেলার গুরমার হাওরে পানি প্রবেশ করায় আমাদের সবগুলো হাওর এখন ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় আমাদের হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদেন (ইউপি) সদস্য শিমুল আহমেদ বলেন, ‘পাটলাই নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে রোববার বিকেলে হঠাৎ গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে যায়। এতে আট-দশটি গ্রামের কৃষকের শতশত বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে যায়।’

ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, ‘দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরের বর্ধিতাংশ উপ-প্রকল্প ২৭ নম্বর বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় গলগলিয়া ও পানার হাওরের প্রায় ৩০৯ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা কিছু ধান কেটে ফেলেছেন। হাওরের পাকা ধান কেটে ফেলায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। দুটি হাওরেই ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাহিরপুর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘গুরমার হাওরের ২৭ নম্বর বাঁধটি কেন ভেঙে গেছে এবং প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। বাঁধের কাজে গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, ‘আমরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ঝড়-বৃষ্টি উপক্ষো করে দিন-রাত বাঁধ রক্ষায় করেছি। কিন্তু বর্ধিত গুরমার হাওরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৭ নম্বর প্রকল্পের বাঁধটি হঠাৎ করে ভেঙে গেছে। বাঁধ নির্মাণকাজে অনিয়ম আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমাদের ধারণা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হয়তো বাঁধটি ভেঙে গেছে। আমরা ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করব।’

গুরমার হাওরের বোরো ফসলের বাঁধ রক্ষায় কাজ করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করেছি। বাঁধ রক্ষায় আমরা দিন-রাত কাজ করে অনেকগুলো ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু হটাৎ করে পানির চাপে গুরমার হাওরের বাঁধের এই অংশ ভেঙে গেছে।’

 

Comment here