বাংলাদেশে টেস্ট কম আক্রান্ত বেশি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বাংলাদেশে টেস্ট কম আক্রান্ত বেশি

জাহিদুর রহমান : পরীক্ষার পরিধি বাড়ানোর পর ৩৭তম দিনে দেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। মঙ্গলবার নতুন করে ২০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ১২ জনে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। এরপর মঙ্গলবার ৩৭তম দিন যায়। আক্রান্তের সংখ্যা প্রথম ১০০ জনে পৌঁছাতে সময় লাগে ২৮ দিন। কিন্তু গত কয়েক দিনে এই চিত্রে পরিবর্তন আসে। রোববার ১৩৯ জনের দেহে, সোমবার ১৮২ জন এবং মঙ্গলবার ২০৯ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ার তথ্য দিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)।

সর্বমোট টেস্ট করা হয়েছে ১৩ হাজার ১২৮ জনকে। আর করোনা শনাক্ত হয়েছে এখন পর্যন্ত ১০১২ জন। মারা গেছেন ৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১৯০৫ জনের পরীক্ষা হয়। করোনায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত একদিনে মৃত্যু ও শনাক্তে মঙ্গলবারই সর্বোচ্চ।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে ওয়ার্ল্ডওমিটার নামে একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার ইতালি, যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সের তুলনায় বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে মৃত্যুহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের আশপাশে কেউ নেই। অন্যদিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রে মোট ২৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮৬ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, যাতে পজিটিভ রেজাল্ট আসে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৫ জনের শরীরে। বিশ্বে সব থেকে বেশি করোনা আক্রান্ত এখন যুক্তরাষ্ট্রেই। পাশাপাশি সব থেকে বেশি করোনা পরীক্ষাও হয় ওই দেশে।

এরপর পরীক্ষার নিরিখে এগিয়ে জার্মানি, ইতালি ও রাশিয়া। এই তিন দেশে যথাক্রমে ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৮৭, ১০ লাখ ৭৩ হাজার ও ১৪ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় জার্মানিতে ১ লাখ ৩১ হাজার, রাশিয়ায় মাত্র ২১ হাজার ও ইতালিতে ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।

স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনেও করোনা পরীক্ষার হার অনেক উপরে। এসব দেশের সব কটিতে কমপক্ষে সাড়ে তিন লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ২ লাখ ৬ হাজার টেস্ট সম্পন্ন করে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশের দুই গুণের বেশি আয়তন ভিয়েতনামের। তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৫৯ জন, বাংলাদেশের ১১০৬ জন। ভিয়েতনামে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে কেউ মারা যায়নি। শনাক্ত হয়েছে ২১৬ জন। এর মধ্যে ১৬৯ জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। দেশটিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮২১ জনের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে গত দু’দিনে পরীক্ষার পরিধি বৃদ্ধির পর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিধি বাড়ানো হলে আরও আক্রান্ত শনাক্ত হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে যত বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত করা যাবে, তত বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে পরীক্ষার হার কম। এ কারণে সংক্রমণের হারও কম। কিন্তু মৃত্যুহার বেশি। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শুরুতে দু-একজনের মধ্যে সংক্রমণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। অর্থাৎ প্রথমে দু-একজনের মাধ্যমে সংক্রমণ শুরু হয়ে পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী হয়ে সর্বত্রই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ শুরুর পর এক মাসের মধ্যে কোনো দেশেই বাংলাদেশের মতো আক্রান্তের সংখ্যা হয়নি। ওইসব দেশে দুই মাস পর করোনা মহামারি রূপ নেয়।

চীনের পর যেসব দেশে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে সেখানে প্রথম সংক্রমণের পর ৩৮ থেকে ৭৬ দিনের মাথায় একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হতে দেখা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ৭৬ দিনের মাথায় একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত পাওয়া যায় ৩২ হাজার ১০৫ জন। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৬৭তম দিনে, ফ্রান্সে ৬৬তম, জার্মানি ও স্পেনে ৬১তম, ইতালিতে ৫৩তম, ইরানে ৪২তম এবং নেদারল্যান্ডসে ৩৮তম দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ধরা পড়ে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আক্রান্তের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যেতে পারে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ কিংবা মে মাসের প্রথম দিকে আক্রান্ত বাড়তে পারে।

Comment here