বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন খোকা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

বাবা-মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন খোকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণের অশ্রুসিক্ত বিদায়ের পর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার সাবেক মেয়র ও মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকাকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সকাল ৮টায় তার মরদেহ দেশে পৌঁছার পর ৫ দফা নামাজে জানাযা শেষে বাব-মায়ের কবরে পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

মরদেহ কবরে নামানোর আগে ক্র্যাক প্ল্যাটুনের এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডারকে পুলিশের ১৭ সদস্যের একটি চৌকশ দল ঢাক জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আবদুল আউয়ালের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। তারা এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রনাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা স্যালুট জানায়। এই সময়ে পুলিশের এডিসি নাজমুর নাহারসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় নিউইয়র্ক থেকে অ্যামিরাটস এয়ারলাইন্সের বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার মরদেহ পৌঁছায়। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কফিন গ্রহণ করেন।

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলাম, আতাউর রহমান ঢালী, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, কামরুজ্জামান রতন, নাজিমউদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, বজলুল বাসিত আনজু, নবী উল্লাহ নবী, এসএম জাহাঙ্গীর, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ মহানগর নেতৃবৃন্দ।

খোকার কফিনের সঙ্গে তার স্ত্রী ইসমত হোসেন, ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক  হোসেন ও ইশফাক হোসেন এবং মেয়ে সারিকা সাদেক ও বিএনপি  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামসহ স্বজনরাও এসেছেন।ads

কবরস্থানে সামনের দিকে তার মা সালেহা খাতুন ও বাবা এম এ করীমের কবরে রয়েছে। দাফনের সময় মরহুমের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মহানগর দক্ষিনের সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেলসহ দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, আত্মীয়-স্বজরা উপস্থিত ছিলেন।

বিমানবন্দর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ সংসদ ভবনের আনা হয়। সেখানে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মওদুদ আহমদ, রাশেদ খান মেনন, তোফায়ের আহমেদ,এম মোরশেদ খান, অলি আহমেদ, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, মশিউর রহমান রাঙ্গা, জয়নুল আবদিন ফারুক, উকিল আবদুস সাত্তার, আলমগীর কবির, হারুনুর রশীদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংককের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ রাজনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।

পরে বিরোধী দলের পক্ষে মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিএনপির সংসদীয় গ্রুপ, এলডিপির পক্ষ থেকে খোকার কফিন পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্পিকার ও সংসদ এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে কফিনে  কোনো শ্রদ্ধা জানানো হয়নি।

এরপর বেলা ১২টা থেকে এক ঘণ্টা কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য রাখা হয়। গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খানসহ বামসংগঠনগুলো ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সেখান থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রয়াত নেতার কফিনটি দলীয় পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বাদ যোহর অনুষ্ঠিত এই জানাযায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। দলের পক্ষ থেকে কফিনে দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

প্রথমে দলের পক্ষ থেকে, পরে কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে তার কফিনে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়। এ সময় নেতা-কর্মীদের অঝোরে কাঁদতে দেখা যায়।

দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে খোকার বড় ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বলেন, ‘বাবা মৃত্যুর আগে বলেছেন, আপস করে তিনি দেশে ফিরতে চান না। দালাল হয়ে মরতে চান না।’

জানাজার পর মুক্তিযোদ্ধা খোকার কফিনে স্যালুট জানান জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা। এদের মধ্যে ছিলেন সেক্টার কমান্ডার শাহজাহান ওমরসহ মুক্তিযোদ্ধারা।

এই জানাজায় শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মাহবুবউদ্দিন খোকনহ দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামী অধ্যাপক মজিবুর রহমান, হামিদুর রহমান আযাদ, শামীম সাঈদী, জাগপার খোন্দকার লুফর রহমান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জানাজায় অংশ নেন। নয়া পল্টনের কার্যালয় থেকে ফকিরের পুল মোড় পর্যন্ত সড়ক ও তার পাশ-পাশের গলিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এই জানাজায় দাঁড়ান।

বিএনপির কার্যালয় থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হয ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে। সেখান জানাজায় অংশ নেন দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকনসহ কাউন্সিল ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় খোকার প্রিয় ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নে। সেখানে জানাজার পর গোপীবাগে পৈত্রিক বাসভবন আত্মীয়-স্বজনদের দেখানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বাদ আসর ধুপখোলা মাঠে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সর্বশেষ জানাজার পর জুরাইনে দাফন করা হয় এই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে।

Comment here