বিএনপির সামনে দুই চ্যালেঞ্জ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

বিএনপির সামনে দুই চ্যালেঞ্জ

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘শক্ত প্রতিপক্ষ’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দাবি মানতে বাধ্য করাতে বিএনপিকে দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলটির নেতারা বলছেন, এই চ্যালেঞ্জ দুটি হচ্ছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক। আন্দোলনের মাত্রা আরও তীব্র করে রাজপথ দখল এবং ভারত-যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার মাধ্যমে কূটনৈতিকভাবে আরও চাপ সৃষ্টি করা। আর এতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করতে সংলাপে বসতে বাধ্য হবে ক্ষমতাসীন দলটি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের বদিউল আলম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সুশীল সমাজ, দেশের রাজনৈতিক দল সবাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এই বিষয়টিই সরকারকে শোনাতে এবং তাদের রাজি করাতে হবে বিএনপিকে। শুধু আন্দোলন করে হবে না, সরকারের সঙ্গে আলোচনায়ও বসতে হবে।’

এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর, বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি মনহুম জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে গঠিত দলটি চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চার দশক পার করা দলটির নেতাকর্মীদের অনেকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের নানা হিসাব-নিকাশে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালত দণ্ড ঘোষণার পর রাজনীতি থেকে দূরে আছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে দল পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা মনে করেন নানা শঙ্কা থাকলেও দলের বড় সাফল্য হচ্ছে, বিএনপি ভাঙেনি।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হোক, দায়বদ্ধ দল হোক এবং কর্মসূচিভিত্তিক দল হোক।’

 

 

বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের মনোভাব মেনে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে আট মাস ধরে কৌশলে দূরত্ব রাখছে বিএনপি। এ সময়ে যুগপৎ ধারায় সমমনা দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করছে। এক দফার ভিত্তিতে বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছে দলটি।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, গত এক বছরের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রাজনীতিতে দেশে-বিদেশে দলের গুরুত্ব বেড়েছে। দলীয় নেতাদের ভাষ্য, যারা এক সময় এড়িয়ে চলত তারা তো আছেই, নতুন করে অনেকে নিয়মিত সম্পর্ক রেখে চলছেন। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী, দলের মধ্যে এখনো ওয়ান ইলেভেন সৃষ্ট অনৈক্য দূর হয়নি।

এ অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দ্রুতই ঘনিয়ে আসছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ১ নভেম্বর থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনো দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২০১৪ সালে একতরফা এবং ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। এ অবস্থায় দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছর আমাদের শপথÑ স্বৈরাচারের বিদায় ঘটিয়ে দেশের মানুষের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা।’

প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। শীর্ষনেতাদের অনেকেই দ-প্রাপ্ত। এ অবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিদেশিদের চাপে আছে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থান বিএনপির কাছে এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত এখনো আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে ভাবছে না। আবার দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের সঙ্গে বিএনপির সেই আগের সখ্য নেই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের আগের মতো মাথাব্যথাও নেই। পাকিস্তানেরও প্রভাব কমেছে দেশের রাজনীতিতে।

ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারত বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী। বাংলাদেশে কী হয় তার প্রভাব ভারতে পড়ে, ভারতে কী হয় তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়ে। অতএব, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের গুরুত্ব রয়েছে। যদিও আমাদেরও থাকার কথা, যা আমাদের নেই।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, চলমান আন্দোলনে সফল হতে গেলে রাজপথে বড় রকমের ঝাঁকুনি দিতে হবে। পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশে^র মনোভাব একযোগে ইতিবাচক হওয়া খুবই জরুরি। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে রাজপথে সফলতার পাশাপাশি বিএনপি কূটনৈতিকভাবেও সফল হতে হবে।

সাড়ে ৭ বছর আগে কাউন্সিল হয়েছিল

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ সর্বশেষ কাউন্সিল করে বিএনপি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছরের মাথায় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সাড়ে সাত বছরেও হয়নি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘নেতাকর্মীরা ঠিকমতো একত্রে বসে গল্পও করতে পারে না। এমন বৈরী পরিবেশে আর কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। রাজনৈতিক পরিবেশ পেলে আমরা অবশ্যই কাউন্সিল করব।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিল না হলেও বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের জেলা এবং মহানগরসহ তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়মিতভাবে চলছে।

কর্মসূচি বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায়। সভাপতিত্ব করবেন বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। আগামীকাল ১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টায় জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। এতে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এ দিন বেলা ৩টায় বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে।

অনুরূপভাবে সারাদেশের ইউনিটগুলোতে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী আগামীকাল শুক্রবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে। ইউনিটগুলো নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে অনুযায়ী আলোচনাসভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে।

Comment here