বিষ খেয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বিষ খেয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা

মোঃ আলেক উদ্দীন দেওয়ান, স্টাফ রিপোর্টার : চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্বামীর সাথে বিরোধের জের ধরে কৃষি জমিতে দেয়া ঘাস মারা বিষ খেয়ে মারা গেছেন এক গৃহবধূ। রবিবার (০৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। মৃত গৃহবধূ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহার-চাঁদলাই গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪৫)।
রবিবার সন্ধ্যার পর রামেক হাসপাতাল থেকে স্বামী মনিরুল ইসলামের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে গেলে বিপত্তি দেখা যায়। নিহতের মা-ভাইয়েরা তাদের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে গিয়ে দাফন করার দাবি করে। অন্যদিকে, স্বামী মনিরুল ইসলাম ও তার ছেলে-মেয়েরা নিজ গ্রামেই মরদেহ দাফন করতে চাই। এমনকি আতাহার-চাঁদলাই গ্রামে তারা কবর খননের কাজও শেষ করে।
মৃত ফাতেমা বেগমের বাবার বাড়ি সদর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামে। স্বামী মনিরুল ইসলামের বাড়িতে মরদেহ ধোয়ার কাজ শুরু হলে রবিবার রাত ৯টার দিকে বাধা দেয়, তার শশুরবাড়ির লোকজন। এসময় তারা প্রায় এক ঘন্টা লাশ আটকে রেখে নিয়ে যাওয়ার দাবি করে। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় রাত ১১টার পর আতাহার-চাঁদলাই গ্রামেই মরদেহ দাফন সম্পন্ন করা হয়।
নিহতের মা শাহজাদী বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে জামাই অনেক মারধর ও নির্যাতন করে আসছে। এমনকি বিষ খাবার দিনও ব্যাপক তাকে মারধর করা হয়েছে। তাকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে তারা। খুনিদের হাতে মেয়েকে দাফন করতে দিব না বলে লাশ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু তা হলো না। মেয়েকে নিয়ে যেতে পারলাম না।
নিহতের স্বামী মনিরুল ইসলাম জানান, ছেলেকে বিদেশে পাঠাব। তাই শশুরবাড়ি থেকে কিছু টাকা ধার চেয়েছিলাম। টাকা দিবে না জানার পর সামান্য কথা কাটাকাটি হয় আমাদের মাঝে। এনিয়েই ঘরে থাকা ঘাস মারা বিষ খেয়ে নেয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। তার প্রতি কোন শারীরিক বা মানুষিক নির্যাতন করা হয়নি বলে জানান তিনি।
নিহত ফাতেমা বেগমের ভাই দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ সংসারে আমার বোন কোনদিন সুখী হতে পারেনি। বারবার ঝামেলা করে, আর আমরা তাদের সংসারের দিকে দেখে রেখে যায়। কিন্তু এবার তার জীবনটাই নিয়ে নিল। যদিও লাশ চেয়ে পেলাম না। আমরা এর বিচার চাই।
মনিরুল ইসলামের ছেলে সাকিরুল ইসলাম জানান, শনিবার (০৬ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিষ খায় আমার মা। বিষ খাওয়ার কিছু সময় পরেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে রাত ১১টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরদিন রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন বলেন, বিষ খেয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। তবে লাশ দাফন নিয়ে নিহতের শশুরবাড়ি ও বাবার বাড়ির লোকজনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় রাতেই লাশ দাফন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Comment here