বড় হচ্ছে গ্রিন টির বাজার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বড় হচ্ছে গ্রিন টির বাজার

*গত বছর সবুজ চায়ের ব্যবহার হয় ১ লাখ ৩৫ হাজার কেজি

*বাংলাদেশে বছরে ৩ লাখ কেজির মতো সবুজ চা উৎপাদিত হয়
*দিন দিন চাহিদা বাড়তে থাকায় নতুন কারখানা স্থাপন হয়েছে

দুধ-চিনি মেশানো চায়ের স্বাদে অনেকেরই এখন অরুচি। মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে এই পানীয় পানের ক্ষেত্রেও। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের অনেকেই এখন সকালটা শুরু করতে চান দুধ-চিনিবিহীন চা দিয়ে। আরেকটু সচেতন মানুষ আরও এক ধাপ এগিয়ে বেছে নিচ্ছেন ‘গ্রিন টি’ বা সবুজ চা।

চা ব্যবসায়ীদের মতে, সময়ের হিসাবে কয়েক বছরের মধ্যে এই পরিবর্তন এসেছে চা পানে। ওজন নিয়ন্ত্রণ, ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমানোর মতো নানা উপকারের কথা ভেবে এই চা পানে ঝুঁকছেন সচেতন মানুষেরা। সাধারণ চায়ের চেয়ে অধিকতর স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের চায়ের কাপে জায়গা করে নিয়েছে সবুজ চা।
বাংলাদেশ চা বোর্ড ও সবুজ চা বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর তথ্যে দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে দেশে সবুজ চায়ের ব্যবহার বাড়ছে। বছরে এ বৃদ্ধির হার প্রায় ১৫ শতাংশ। অথচ সাধারণ চায়ের চাহিদা বৃদ্ধির হার কমবেশি ৫ শতাংশ।
চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সবুজ চা বিপণন ও উৎপাদনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কোম্পানি। পাঁচ বছর আগেও দেশে সবুজ চা বাজারজাত করত দুটি কোম্পানি। এখন নিজস্ব বাগানের উৎপাদন ও আমদানি করে সবুজ চা বাজারজাত করছে ছয়টি কোম্পানি। এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান।
চা বোর্ড ও ব্যবসায়ীদের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩ সালে দেশে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার কেজি সবুজ চা ব্যবহৃত হয়। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮ হাজার কেজিতে। গত দুই বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে ১ লাখ ৩৫ হাজার কেজিতে উন্নীত হয়েছে।

ফিনলে দিয়ে শুরু
উদ্যোক্তারা জানান, বাংলাদেশে সবুজ চায়ের যাত্রা শুরুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ফিনলে গ্রুপের নাম। স্কটল্যান্ডভিত্তিক এই চা কোম্পানি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বড় আকারে সবুজ চা উৎপাদন শুরু করে ১৯৮৩ সালে। শুরুতে শতভাগ সবুজ চা রপ্তানি করত তারা। তবে কয়েক বছর ধরে দেশে চাহিদা বাড়তে থাকায় বাজারজাত শুরু করে এই কোম্পানি।
ফিনলের পর কাজী অ্যান্ড কাজী টি কোম্পানি ২০০৬ সালে যুক্ত হয় সবুজ চা উৎপাদনে। কাজী অ্যান্ড কাজী উৎপাদিত সবুজ চা শুরুতে সিংহভাগই রপ্তানি করত। তবে দেশে চাহিদা বাড়তে থাকায় মোড়কজাত করে বাজারজাত করছে তারা। জানতে চাইলে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শোয়েব আহমেদ কোম্পানির সবুজ চায়ের বাজার নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী হননি।

পেডরোলো গ্রুপের হালদা ভ্যালি চা-বাগানে চার বছর আগে সবুজ চা উৎপাদন শুরু হয়। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত এই বাগানে চীন থেকে এনে চারা লাগানো হয়। চা-পাতা সংগ্রহ থেকে উৎপাদনের প্রক্রিয়া তদারকিও করছেন চীনের চা বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে দামি ও উন্নত মানের ‘ড্রাগনওয়েল গ্রিন টি’ দেশেও বাজারজাত শুরু করেছে এই গ্রুপ। পেডরোলো গ্রুপের চেয়ারম্যান নাদের খান প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাজ্য, চীন, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের বাজারে এই চা রপ্তানি হয়েছে। দেশীয় বাজারেও সবুজ চায়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় ড্রাগনওয়েল এগুলো বাজারজাত করছে।

স্কয়ার গ্রুপ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা ইউনিয়নে বছরে ২৫ হাজার কেজি উৎপাদনক্ষমতার সবুজ চায়ের কারখানা চালু করেছে। শাহবাজপুর চা-বাগানের কুঁড়ি ও পাতা অর্গানিক সবুজ চা তৈরিতে ব্যবহার করছে তারা। তবে স্কয়ার গ্রুপ প্রাথমিকভাবে নিজেদের ৬০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নিজস্ব প্রয়োজনে পুরোটাই ব্যবহার করছে। তবে ভবিষ্যতে এর বাজারজাত করবে তারা।

নতুন বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণ
চাহিদা বাড়তে থাকায় সবুজ চা উৎপাদনে নতুন কারখানা স্থাপন করেছে চা বোর্ডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। শ্রীমঙ্গলে ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে নতুন এই কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, বছরে ৪০ হাজার কেজি উৎপাদনক্ষমতার নতুন কারখানাটি এ মাসের শেষে চালু হতে পারে। ফিনলেও এ বছর জুন বা জুলাইয়ে কারখানা সম্প্রসারণ করবে।

আমদানি-রপ্তানির চিত্র
সবুজ চায়ের যে বাজার বাড়ছে, তা আমদানির চিত্রেও উঠে এসেছে। কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবুজ চা আমদানি হয় ৩ হাজার ১৭০ কেজি। গত অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ হাজার ৫১০ কেজিতে। তবে সবুজ চা রপ্তানির সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রগুলো জানায়, রপ্তানির পরিমাণ এক লাখ কেজির বেশি।

বৈশ্বিক বাজার 
আন্তর্জাতিক টি কমিটির তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে বিশ্বে মোট চা উৎপাদিত হয় ৫৫০ কোটি ৩০ লাখ কেজি। এর মধ্যে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ সবুজ চা। এর পরিমাণ ১৭৮ কোটি ৮০ লাখ কেজি। এর মধ্যে এক চীনেই উৎপাদিত হয় ১৫৫ কোটি কেজি। এ ছাড়া ভিয়েতনামে ৯ কোটি কেজি, জাপানে ৭ কোটি ৬৯ লাখ কেজি, ভারতে ১ কোটি ৮৬ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। একই সময়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় ২ লাখ ৭০ হাজার কেজি। সবুজ চাসহ গত বছর বাংলাদেশে মোট চা উৎপাদিত হয় ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে বিশ্বে ৩৬ কোটি ১৭ লাখ কেজি সবুজ চা রপ্তানি হয়। এর মধ্যে চীন একাই রপ্তানি করে ২৭ কোটি কেজি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের রপ্তানি ৬ কোটি ৩৫ লাখ কেজি। আর ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি ১ কোটি ২৮ লাখ কেজি।

Comment here