ভাই-ভাবি-ভাতিজাকে হত্যার বর্ণনা দিলেন দ্বীন ইসলাম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ভাই-ভাবি-ভাতিজাকে হত্যার বর্ণনা দিলেন দ্বীন ইসলাম

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নিহত আসাদ মিয়ার ছোট ভাই দ্বীন ইসলাম (৩৮)। স্বীকারোক্তিতে তিনি ভাই, ভাবি ও ভাতিজা হত্যার লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছেন। আজ রোববার আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে দ্বীন ইসলাম জানান, বড় ভাই আসাদ মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৪৫) ও তাদের শিশুপুত্র লিয়নকে (১২) একজনের পর আরেকজন এভাবে একাই হত্যা করেছেন। পরে তিনি একাই তিনজনের লাশ একটি গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেন।

এদিকে, আজ নিহত আসাদ মিয়ার মা কেওয়া খাতুন, বোন নাজমা বেগম ও ভাগ্নে আল-আমিনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কটিয়াদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার, সঠিক কারণ নির্ণয়, প্রকৃত আসামিদের শনাক্তকরণসহ জমিজমা বিরোধের সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য আসামিদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড আাবেদন করলে ৫ নম্বর বিচারিক আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুন নূর প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার অপর তিন আসামি নিহতের ছোট বোন নাজমা (৪২), মা কেওয়া বানু (৭০) ও আল আমিনকে (৩০) ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

 

এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবীব উল্লাহ তার খাস খামরায় ১৬৪ ধারায় মামলার প্রধান আসামি দ্বীন ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে দ্বীন ইসলাম জানান, বুধবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত রাত ১২টা পর্যন্ত সময়ে ধারাবাহিকভাবে সে এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটিয়েছে। জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাই, ভাবি ও ভাতিজাকে সে হত্যা করেছে বলেও দ্বীন ইসলাম জানিয়েছে।

স্বীকারোক্তিতে দ্বীন ইসলাম জানিয়েছে, পূর্বশত্রুতাবশত পরিকল্পনামাফিক হত্যা করার জন্য বুধবার সকাল থেকে সে পরিকল্পনা করতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাবি পারভীন আক্তার রান্না করছিল। এ সময় পারভীন আক্তারের মাথায় পেছন দিক থেকে সে শাবল দিয়ে সজোরে আঘাত করে। এতে ছটফট করে কিছুক্ষণের মধ্যে পারভীন আক্তার মারা যায়। প্রায় আধঘণ্টা পর ভাতিজা লিয়ন বাড়ি ফিরলে তার মাথায়ও শাবল দিয়ে দ্বীন ইসলাম সজোরে আঘাত করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য শাবল দিয়ে পুনরায় লিয়নের মাথার শিরায় কোপ দিয়ে এফোড়-ওফোড় করে দ্বীন ইসলাম। মা পারভীন ও ছেলে লিয়নের লাশ টেনে বসতঘরে নিয়ে ফেলে রেখে দ্বীন ইসলাম দরজা বন্ধ করে রাখে। এ সময় সে ঘরের পাশে বাঁশঝাড়ের নিচে গর্ত খনন করা শুরু করে। গর্ত খনন শেষে বড় ভাই আসাদ মিয়ার জন্য লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে দ্বীন ইসলাম। রাত ১২টার দিকে আসাদ মিয়া বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে স্ত্রী পারভীনকে ডাক দিলে পেছন থেকে ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে সে। এতে ঘটনাস্থলেই বড় ভাই আসাদ মিয়ার মৃত্যু হয়। পরে লাশ টেনে নিয়ে সেই গর্তে প্রথমে ভাইয়ের লাশ, তারপর ভাবির লাশ ও পরে ভাতিজার লাশ রেখে মাটিচাপা দেয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট গ্রামে মাটিচাপা দেওয়া তিনজনের লাশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করা করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটি খুঁড়ে আসাদ মিয়া, তার স্ত্রী পারভীন আক্তার ও তাদের শিশুপুত্র লিয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আসাদ মিয়া জামষাইট গ্রামের মৃত মীর হোসেনের ছেলে। ওইদিন সকালে আসাদ মিয়ার মেজো ছেলে মোফাজ্জল নানার বাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে মা, বাবা ও ছোট ভাইকে না পেয়ে তাদের খুঁজতে থাকে। ঘরের ভেতর রক্ত দেখে তার সন্দেহ হয়। সারা দিন খোঁজাখুজি করে তাদের কোনো সন্ধান পায়নি মোফাজ্জল।

ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় স্থানীয় লোকজন ঘরের পেছনে নতুন মাটি খুঁড়া দেখে অনুসন্ধান করে। কোদাল দিয়ে মাটি উল্টাতেই শিশু বাচ্চাটির হাত বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে কটিয়াদী থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

এদিকে ঘটনার পর থেকে নিহতের ছোট ভাই দ্বীন ইসলামকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী মুমুরদিয়া বাজারের একটি চা স্টল থেকে দ্বীন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ছোট বোন নাজমা, মা কেওয়া বানু ও প্রতিবেশী আল আমিন এই তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, ‘এ ঘটনায় শুক্রবার নিহতের বড় ছেলে তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে নয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। মামলাটি নিরবচ্ছিন্ন তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’

 

Comment here