‘ভিআইপিদের’ চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল, যা বলছে কর্তৃপক্ষ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

‘ভিআইপিদের’ চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল, যা বলছে কর্তৃপক্ষ

vip

বিবিসি বাংলা : করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এ যদি বাংলাদেশের কোনো ভিআইপি, বিত্তশালী এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকেরা আক্রান্ত হন, তাহলে তাদের জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য ঢাকার একটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং বেসরকারি কয়েকটি বড় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

তবে ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রস্তুত করা আর সেসব হাসপাতালগুলোর নাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় যানজটের মধ্যে সড়কে ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন তৈরির একটি প্রস্তাব ব্যাপক সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয়। গত বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য দীর্ঘসময় ফেরি আটকে রাখা এবং ওই ফেরিতে থাকা আহত একজন স্কুল ছাত্রের অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যুর ঘটনা সেই সময় ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বর্তমানে মূলত ঢাকার দুটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তবে সরকার আরও কয়েকটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করেছে এসব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। এসব হাসপাতালে আক্রান্ত সব রোগীকেই চিকিৎসা দেওয়ার কথা।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ‘ভিআইপিদের’ আলাদা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভালো সচ্ছল পেশেন্ট আছে না? কথা উঠেছিল তারা কোথায় ভর্তি হতে পারে? সরকারিভাবে আমরা যা করছি, সেগুলো তো আপামর জনগণের জন্য। যে শতশত মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তাদের জন্যে তো একটা ব্যবস্থা আছেই।’

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ধরুন একজন প্রখ্যাত শিল্পপতি, উনি হয়তো করোনার চিকিৎসায় সরকারি যে ব্যবস্থাপনাগুলো আছে, এগুলোতো সাধারণ মানের, সেখানে যেতে উনি ইতস্তত করলেন। তো উনি অ্যাপোলো (বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতাল), ইউনাইটেড বা স্কয়ারে গেলে যেন চিকিৎসা পায়। তারা টাকা দিয়েই চিকিৎসা করাবেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে আগে রাজি হতে হবে।’

‘এখন এভারকেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল), ইউনাইটেড বা স্কয়ারের সাথে যাতে একটা বোঝাপড়ায় আসা যায়, তা নিয়ে সরকারের কথাবার্তা চলছে। সরকার আলাপ করছে যাতে পুরো হাসপাতাল অথবা হাসপাতালের একটা ইউনিট করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়, বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব।

ভিআইপিদের মধ্যে কারা পড়বেন? এই তালিকায় মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তারাও কি আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে শুধু বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য এ ধরনের একটি ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছিল। আমাদের কাছে বারবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ এসেছিল যদি কোনো কূটনীতিক বাংলাদেশে অবস্থানরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদেরকে কোথায় নেওয়া যায়? এজন্যে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালটা (শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল) নির্ধারণ করা আছে। পরে আমরা চিন্তা করেছি এটাও হতে পারে যে সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক আক্রান্ত হল, তাদেরও ওখানে নেওয়া যেতে পারে।’

সরকারের মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদরাও কি এখানে যাবেন? এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।

তবে জানা গেছে, কিছু হাসপাতালে প্রভাবশালীদের ইতিমধ্যেই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে সাংবাদিকরাও রয়েছেন।

সাধারণ মানুষের সঙ্গে বৈষম্য

স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ ধরনের সিদ্ধান্তকে ‘সাধারণ মানুষের সাথে বৈষম্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিহত করার একটা পদ্ধতি হলো সামাজিক দূরত্ব। কিন্তু করোনা সামাজিক বৈষম্যও বাড়াচ্ছে। তাদের জন্য তো প্রাইভেট হাসপাতালগুলো এমনিতেই আছে। আবার তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার মানেটা কি?’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্যসেবায় সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। যারা অবস্থাপন্ন, যারা বাইরে চিকিৎসায় যায়, তারা তো বাইরে যেতেই পারে। তারা প্লেন ভাড়া করতে পারে, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে পারে। তাদের জন্য আলাদা কিছু করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এতে লোকের বিদ্বেষ বেড়ে যাবে।’

‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উদাহরণ তৈরি করবেন। অথচ তারাই সর্দি-কাশি হলে বাইরে চিকিৎসা করেন। সেজন্য সাধারণ মানুষও বিলাতে যেতে না পারলেও তখন তার স্বপ্ন হয় কোলকাতা গিয়ে চিকিৎসা করাই’, বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।

এসব উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা আরও নষ্ট হবে বলেও জানান তিনি।

Comment here