ভোট পর্যবেক্ষণের নামে ষড়যন্ত্র চলবে না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ভোট পর্যবেক্ষণের নামে ষড়যন্ত্র চলবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক মুহম্মদ আকবর : ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত। তিনি সরকারের নানা উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। ভোটের মাঠের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। সমসাময়িক রাজনীতি ও ভোট নিয়ে আমাদের সময়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক মুহম্মদ আকবর

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করতে ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। আরও অনেক দেশের দৃষ্টি আছে বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে। সবার তীক্ষè দৃষ্টির সামনেই ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন হবে; কোনো চাপ অনুভব হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘একদমই না। আমি তো খুশি। গোটা দুনিয়া আসুক। ওনারা আসছেন; কারণ আমরা আমাদের দরজা খোলা রেখেছি। গোটা দুনিয়া এসে যদি দেখে, দেশে ভালো নির্বাচন হয়, তা হলে দেশের মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা যে কাজটা করতে চায়, সেটা পারবে না। আমাদের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু আমরা তাদের (বিদেশি কূটনীতিকদের) বলেছি, তোমাদেরও নিরপেক্ষ হতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লোক নিয়োগ দিলে হবে না, যারা পর্যবেক্ষণের নামে ষড়যন্ত্র করবে। এগুলো চলবে না।

advertisement

বিরোধী দলের গতিবিধি মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মাঠে নামানোর একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীরা সদিচ্ছায় নামছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘সবাই ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করছেন, পরিশ্রম করছেন। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দারুণভাবে আমাকে সহযোগিতা করছেন। এ আসনে দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না, সর্বশেষ নির্বাচনে যিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন, তিনিও বহু দিন অসুস্থ থাকায় এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিভাবকহীন ছিলেন। আমাকে পেয়ে তারা বেশ উজ্জীবিত।’

আপনাকে দিনরাত ভোটের মাঠে যেতে দেখা যাচ্ছে। সাড়া পাচ্ছেন কেমন? জবাবে আরাফাত বলেন, ‘প্রচ- সাড়া পাচ্ছি। ঢাকা-১৭ আসনটিকে অভিজাত এলাকা বলে চিহ্নিত করা হলেও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। কারণ এ আসনের ৩ লাখ ২৫ হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ৪৬ হাজার থেকে ৪৭ হাজার ভোটার অভিজাত এলাকার (গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন)। ভোটারদের বড় অংশই কিন্তু ভাসানটেক, মাটিকাটা, মানিকদী, কড়াইল আদর্শনগর, কালাচাঁদপুর, নর্দা ও সাততলা বস্তি এলাকায়। মধ্য ও নিম্নবিত্তের ভোটারদের রায়েই এ এলাকার এমপি নির্বাচিত হন। এসব ভোটারের বেশির ভাগই কিন্তু বংশপরম্পরায় নৌকার ভোটার। তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভক্ত। আমার ধারণা, ৮০ শতাংশ ভোট নৌকায় পড়বে।’

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একেক এলাকার চাহিদা আসলে একেক রকম। সব এলাকার সমস্যা এক রকম না, আলাদা আলাদা। সমস্যাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সমাধান করতে হবে। ইতোমধ্যে আমি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছি। সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’

নির্বাচিত হলে সময় পাবেন কম। এ সময়ে আপনি ওই এলাকার মানুষের জন্য কী করতে পারবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো কাউকে কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। তবে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আটকে থাকা কাজগুলো যতটুকু শেষ করা যায়, সে চেষ্টা করব। যদি ফের সুযোগ পাই, তা হলে কাজের ধারাবাহিকতা থাকবে। ভোটারদের কাছে গিয়ে এ কথাই বলছি।’

আপনি জনসংযোগকালে বলেছেন, ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও প্রতিপক্ষ রয়েছে। তারা কারা? জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ তো সব সময় ছিলই। বিএনপি-জামায়াতই আমার মূল প্রতিপক্ষ। মূলত আমার না, আমাদের প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি আমাদের মূল প্রতিপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই করে যেতে হচ্ছে। তারা বারবার প্রমাণ করতে চাইছে, আওয়ামী লীগের আমলে দেশে গণতন্ত্র নেই, নির্বাচন নেই। এমন প্রেক্ষাপটে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়াই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’

আর কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী বলেন, ‘তিনটি বিষয় সামাল দিতে পারলে নিজেকে পূর্ণাঙ্গভাবে বিজয়ী ভাবতে পারব। প্রথমত নির্বাচনে জয়ী হওয়া, দ্বিতীয়ত যথেষ্ট পরিমাণ ভোটারকে কেন্দ্রে আনা এবং তৃতীয়ত একটি বিতর্কমুক্ত সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়া।’

ভোটারদের কেন্দ্রে আনার উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্র খোঁজা, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা বাড়ি থেকে কেন্দ্রে আসার ব্যাপারে অনীহার কারণে অনেকে ভোট দেন না। শ্রমজীবী মানুষের ক্ষেত্রে সংকট অন্যরকম। ভোট দিতে এলে হয়তো অনেকে তাদের সারা দিনের কাজ করতে পারেন না। অনেকে এই নির্বাচনী এলাকার ভোটার, কিন্তু কাজ করেন অন্য এলাকায়। ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনী এলাকায় ছুটি থাকলেও অন্য এলাকায় তো সেই সুবিধা থাকে না।

এমন নানা বিড়ম্বনার কারণে ভোটার উপস্থিতি কমে যায়। উপনির্বাচনে তা আরও কমে যায় ধারণাগত কারণে। অনেকে মনে করেন, ডানে আওয়ামী লীগ, বাঁয়েও আওয়ামী লীগ। প্রার্থী তো এমনিতেই বিজয়ী হবেন। তা হলে কষ্ট করে ভোট দিতে যাওয়ার কী দরকার। আবার আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি-জামায়াত দেখাতে চায় নির্বাচন হচ্ছে না, ভোটাররা আসছেন না নির্বাচনে। আমরা চেষ্টা করছি ভোটারদের কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার বিষয়টি সহজ করতে। প্রত্যেক দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দৌড়াচ্ছি। একটা পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য, ভোটারদের উৎসাহিত করার জন্য নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে থেকে সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

 

Comment here