ভ্যাকসিন তৈরিতে কে কত দূর এগিয়ে? - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
আন্তর্জাতিক

ভ্যাকসিন তৈরিতে কে কত দূর এগিয়ে?

অনলাইন ডেস্ক : ভ্যাকসিন প্রস্তুতের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে অগ্রগতি হচ্ছে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, একটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

করোনার ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে সারা বিশ্বের মানুষ। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রার্থী ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চালাচ্ছে, তবে এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে ভাকসিন সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছাতে অন্তত একবছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

১৬ মার্চ প্রথম প্রার্থী ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়। পরীক্ষাধীন ২০০টির মতো ভ্যাকসিনের মধ্যে হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে ৪৪টি ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিনের পরীক্ষা, উৎপাদন ও সরবরাহে সাধারণত কয়েক বছর সময় লাগে। সবচেয়ে দ্রুত সময়ে অনুমোদন পায় মাম্পসের ভ্যাকসিন, ১৯৬০ এর দশকে চার বছর পর সহজলভ্য হয় এই ভ্যাকসিন।

ভ্যাকসিন গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রথম ভ্যাকসিনের অনুমোদন পেতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২১ সালের শেষের দিকে ২ বিলিয়ন ডোজ সরবরাহের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। অ্যাক্টিভ, ইনঅ্যাক্টিভেটেড, ডিএনএ, আরএনএ/এমআরএনএ ভিত্তিক, ভাইরাস ভেক্টর এবং প্রোটিন সাব ইউনিট-এ ধরনের বিভিন্ন পন্থা অনুসরণ করে ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কোনো ভ্যাকসিনকে তিন ধাপের ট্রায়ালে সফল হতে হবে। অনুমোদন পেতে পারে এমন কিছু সম্ভাব্য প্রার্থী ভ্যাকসিনের বিস্তারিত তথ্য ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

করোনাভ্যাক: সিনোভ্যাক বায়োটেক

চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বায়োটেকের করোনাভ্যাক নামের ইনঅ্যাক্টিভেটেড ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। ব্রাজিল, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ার চালানো তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের ফলাফল নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখনো ক্লিনিকাল ট্রায়াল চললেও স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ব্যবহারের জন্য জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীন।

ফেজ-২ হিউম্যান ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা গেছে, কোনো ধরনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম ভ্যাকসিনটি।

BNT162b2: ফিজার- বায়োএনটেক

মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ফিজার এবং জার্মান বায়োটেকনোলজি সংস্থা বায়োএনটেকের এই ভ্যাকসিনটি একটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন। উচ্চ সংক্রমণ হারের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। প্রথম দুই ধাপের ট্রায়ালের ফলাফলে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম এবং দেহের টি-সেলকে উজ্জীবিত করে তোলে। ভ্যাকসিনটি সার্বজনীন ব্যাবহারে জন্য কার্যকর কি না, তা অক্টোবরের শেষে জানা যাবে এবং নভেম্বরের মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে সক্ষম কিনা এ ব্যাপারে তথ্য পাওয়া যাবে।

আজ পর্যন্ত কোনো সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এমআরএনএ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা তুলনামূলক সহজ।

এমআরএনএ-১২৭৩: মডার্না

মার্কিন প্রতিষ্ঠান মডার্নার তৈরি এই ভ্যাকসিনও এমআরএনএ ভ্যাকসিন। জুলাইতে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয় ভ্যাকসিনটির। ফেজ-১ এর প্রাথমিক ফলাফল থেকে দেখা যায়, ভ্যাকসিনটি তরুণ এবং বয়স্কদের শরীরেও অ্যান্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম। ট্রায়ালে অর্ধেক স্বেচ্ছাসেবকদের টিকা দেওয়া হয়, বাকিদের প্লেসবো শট দেওয়া হয়।

ChAdOx1 nCoV-19: অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনটি একটি ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন। ফেজ-৩ ট্রায়ালে ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। প্রথম দুই ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম। যুক্তরাজ্যে এক রোগীর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় ট্রায়াল সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে।

Ad26.COV2-S: জনসন অ্যান্ড জনসন

জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি অ্যাডেনোভেক্টর ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপ ট্রায়ালে বিভিন্ন দেশের ৬০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন। একজন স্বেচ্ছাসেবক অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১২ অক্টোবর থেকে ট্রায়াল স্থগিত আছে। প্রতিষ্ঠানটি টিকার একটি ডোজ নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছে।

স্পুটনিক ফাইভ: গামেলেয়া ন্যাশনাল সেন্টার অব এপিডেমিওলোজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি

ফেজ-৩ ট্রায়াল শেষ করার আগেই ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। প্রথম দুই ধাপের ট্রায়ালের ফলাফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে মাত্র ৭৬ জনের ওপরে পরীক্ষা করেই ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দেওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অনেক বিশেষজ্ঞ।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে পরীক্ষাধীন ব্যক্তির ওপর টিকা কার্যকর এবং নিরাপদ কি না, বোঝা গেলেও ট্রায়ালের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর নির্দিষ্ট সময় পর কোনো ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পাওয়া যায় না। জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন অ্যাক্সেস সেন্টারের উপ-পরিচালক নাওর বার জিভ জানান, ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিরীক্ষণ করা বেশ কঠিন। এ ব্যাপারে কখনোই শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। ক্রমাগত নিরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করার এই ধাপকে ফেজ-৪ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও বলা হয়। এতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগে।

ভ্যাকসিন সহজলভ্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধি না মানলে চলবে – ব্যাপারটি এমন নয় বলেও জানান বার জিভ। তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়েই এই ধরনের প্রত্যাশা ভ্যাকসিনের ব্যাপারে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে, কারণ ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পরও ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

 

Comment here