মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কী কী সুযোগ-সুবিধা পান - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কী কী সুযোগ-সুবিধা পান

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবার ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় তারা শপথ নেবেন। এবারের মন্ত্রিসভায় পুরনোদের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন মুখ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন।

একজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী কী কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পান বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই জানার আগ্রহ আছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তা নির্ধারণ করা আছে ‘দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) অ্যাক্ট’-এ।

এতে বলা হয়েছে, গাড়ি, বাড়ি, চিকিৎসা খরচসহ অন্তত ১৩ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।

বেতন ও বাড়ি ভাড়া

একজন মন্ত্রীর মাসিক বেতন ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর বেতন ৯২ হাজার ও উপমন্ত্রীর ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা। দায়িত্ব পাওয়ার পর একজন মন্ত্রী সরকারি ব্যয়ে একটি সুসজ্জিত বাসভবন পান বিনা ভাড়ায়। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী একই সুবিধা পেয়ে থাকেন।

তবে মন্ত্রী যদি নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাহলে সরকার থেকে তিনি মাসিক ৮০ হাজার টাকা করে ভাড়া পাবেন। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী পাবেন ৭০ হাজার টাকা করে। এ ছাড়া নিজ বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলে সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে তিন মাসের বাড়ি ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা পাবেন তারা।

এলাকার উন্নয়নে বরাদ্দ 

নিজ এলাকার মসজিদ, মন্দির উন্নয়নসহ দাতব্য কাজে একজন মন্ত্রীকে বছরে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ খাতে প্রতিমন্ত্রী পান সাড়ে ৭ লাখ ও উপমন্ত্রী পান ৫ লাখ টাকা করে। এ টাকার মধ্যে মন্ত্রী চাইলে একজন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দিতে পারেন। প্রতিমন্ত্রী দিতে পারেন ৩৫ হাজার আর উপমন্ত্রী ২৫ হাজার টাকা।

আপ্যায়ন ভাতা

মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর মন্ত্রীর দপ্তরে দেশি-বিদেশি অনেকে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসেন। নির্বাচনী এলাকার মানুষও দেখা করতে আসেন মন্ত্রীর সঙ্গে। তাদের আপ্যায়নের জন্য একজন মন্ত্রী মাসে ১০ হাজার, প্রতিমন্ত্রী সাড়ে ৭ হাজার ও উপমন্ত্রী ৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী বছরে বিমা সুবিধা পাবেন ১০ লাখ টাকা।

চিকিৎসা ব্যয়

মন্ত্রিসভার সদস্যরা অসুস্থ হলে তার পুরো চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করে। এ ক্ষেত্রে বলা আছে, চিকিৎসা খরচ সীমাহীন। তবে খরচের ভাউচার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিতে হবে।

গাড়ি সুবিধা

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী সরকারি খরচে একটি করে গাড়ি সুবিধা পাবেন। সরকারি প্রয়োজনে বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকায় ভ্রমণের সময় তারা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেকোনো সংস্থা বা দপ্তর থেকে একটি জিপ গাড়ি পাবেন। জ্বালানি বাবদ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী দৈনিক ১৮ লিটার জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন।

একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দেশের ভেতরে কোথাও ভ্রমণে গেলে দৈনিক ভাতা পাবেন দুই হাজার টাকা করে। উপমন্ত্রী পাবেন দেড় হাজার টাকা।

বাড়ির সাজসজ্জা

সরকারি বাড়ি সাজসজ্জা করতে একজন মন্ত্রী প্রতিবছর পাবেন পাঁচ লাখ টাকা। প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা পাবেন চার লাখ টাকা করে। এ ছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বাসভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন ব্যয় পুরোটাই সরকার বহন করে।

১০ সহায়ক

মন্ত্রী নিজের পছন্দ অনুযায়ী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব (পিএস) পাবেন। এ ছাড়া একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং সরকারি কর্মকর্তার বাইরে নিজের পছন্দের একজন সহকারী একান্ত সচিব পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, একজন জমাদার, একজন আরদালি, দুজন অফিস সহায়ক ও একজন পাচক পেয়ে থাকেন।

প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী একজন একান্ত সচিব, একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন জমাদার, একজন আরদালি ও একজন অফিস সহায়ক পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা একটি করে মোবাইল ফোন পাবেন।

মন্ত্রী পদমর্যাদায় চিফ হুইপ ও বিরোধীদলীয় নেতা

চিফ হুইপ ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদটি একজন পূর্ণ মন্ত্রী পদমর্যাদার। তিনি একান্ত সচিব (পিএস), একজন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), দুজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, একজন বাহক, দুজন অফিস সহায়ক ও একজন পাচক পান।

এ ছাড়া আটজন পুলিশ সদস্য, দুজন গানম্যান সুবিধা দেওয়া হয় তাকে। গাড়ির সুবিধাও পেয়ে থাকেন বিরোধীদলীয় নেতা। মন্ত্রীদের মতো বিরোধীদলীয় নেতা সরকারি বাসা পেয়ে থাকেন। সেই বাসার যাবতীয় খরচ সরকারের। এ ছাড়া হুইপ একজন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সংসদ সদস্য যা পান

একজন সংসদ সদস্যের মাসিক বেতন ৫৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া তিনি শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পেয়ে থাকেন। সরকারের কাছ থেকে প্লট পেয়ে থাকেন। আইনপ্রণেতা হলেও এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে গত দুই নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রতিবছর গড়ে পাঁচ কোটি টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বয়স্ক ভাতা, নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ প্রায় ৪০ ধরনের প্রকল্প আছে। সেগুলোর নিয়ন্ত্রণও থাকে সংসদ সদস্যের হাতে।

নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া-আসার ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে পাবেন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। সম্মানী ভাতা বা আপ্যায়ন ভাতা প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা। মাসিক পরিবহন ভাতা পাবেন ৭০ হাজার টাকা, নির্বাচনী এলাকায় অফিস খরচের জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা।

এ ছাড়া প্রতি মাসে লন্ড্রি ভাতা দেড় হাজার টাকা, মাসিক ক্রোকারিজ, টয়লেট্রিজ কেনার জন্য ভাতা ৬ হাজার টাকা, মসজিদ-মন্দির উন্নয়নে বছরে ৫ লাখ টাকা, দেশে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, বাসায় টেলিফোন ভাতা বাবদ প্রতি মাসে ৭ হাজার ৮০০ টাকা দেওয়া হয়। তার সব ভাতা করমুক্ত। একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা যে চিকিৎসা খরচ পান, একজন সংসদ সদস্য ও তার পরিবার তার সমান সুবিধা পেয়ে থাকেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফলে ২২২টি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর স্বতন্ত্র ৬২টি, জাতীয় পার্টি ১১টি ও অন্যান্য দল তিনটি আসনে বিজয়ী হয়।

Comment here