মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এলাচ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এলাচ

রেজাউল রেজা : মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে এলাচ। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে প্রয়োজনীয় এ মসলা পণ্যটির দাম সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকায় পৌঁছে। সম্প্রতি কেজিতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কমলেও দাম এখনো অস্বাভাবিকই রয়ে গেছে। বাজারে বর্তমানে ভালোমানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা কেজি দরে। মাঝারি মানের এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা কেজি।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি মসলার বাজার গতকাল ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। দশ-পনেরো বছরে এলাচের এমন দাম কেউ দেখেননি বলেও অভিমত জানান অনেক ব্যবসায়ী। হঠাৎ এলাচের রেকর্ড ভাঙা দামে হতবাক হয়ে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা। বাধ্য হয়ে ৫০-১০০ টাকার গুটি কয়েক এলাচ কিনেই বাড়ি ফিরছেন অনেকে।

কারওয়ানবাজারে গরম মসলা কিনতে এসেই বিড়ম্বনায় পড়েন বেসরকারি স্কুলশিক্ষক আবুল হোসেন মিলন। তিনি বলেন, এলাচের দাম শুনেই মাথা ঘুরছে। কিনব না ভেবেছিলাম; কিন্তু বাসায় মেহমান আসবে তাই বাধ্য হয়ে দোকানদারকে ৫০ টাকায় যে কয়টা হয় তা-ই দিতে বলি।

কারওয়ানবাজারের মসলা ব্যবসায়ী মো. জুয়েল জানান, খুচরা বাজারে মাঝারি মানের এলাচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকায়। একটু বড় আকারের সবচেয়ে ভালো ও ফ্রেশ এলাচ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫ হাজার কেজি দরে। এ ছাড়া ছোট এলাচের কেজি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে সব ধরনের এলাচের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি ছিল।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের মসলার পাইকারি প্রতিষ্ঠান সবুজ স্টোরের ব্যবসায়ী মো. আবু সাইদ জানান, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের এলাচের দাম কেজিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমেছে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে ভালোমানের এলাচ (বড় আকারের) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের দৈনন্দিন খুচরা বাজারদরের প্রতিবেদনে বলছে এলাচের দাম অনেক বেড়েছে। সংস্থাটির বাজারদরের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এক বছর আগে এলাচের দাম ছিল কেজিপ্রতি ছিল ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা। এর পর পণ্যটির দাম বাড়তে বাড়তে চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ৪২০০ টাকা থেকে ৪৬০০ টাকা হয়। পরে দাম আরও বেড়ে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এলাচের কেজি ৪৩০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা হয়।

এলাচের দাম হঠাৎ এমন বেড়ে যাওয়াকে অস্বাভাবাবিক বলেই স্বীকার করছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের মতে, এলাচের দাম এত বাড়েনি কখনো। তবে আমদানিকারকদের কাছ থেকেই চড়া দামে কিনতে হয়েছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েতুল্লাহ বলেন, ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়েছিল সত্য, তবে বর্তমানে দাম অনেক কমেছে। বাংলাদেশ মূলত মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালা থেকে এলাচ আমদানি করে থাকে। পাশাপাশি ভারত থেকেও আসে এলাচ। বর্তমানে ভারতই আমদানি করছে গুয়াতেমালা থেকে। তবে বাজারে এলাচের ঘাটতি নেই জানিয়ে এনায়েতুল্লাহ বলেন, আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে গেলে আমাদেরও বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়। এখন কিছু অসাধু পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এ সুযোগে দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে এলাচের পাশাপাশি দারুচিনি, জয়ত্রী ও জয়ফলের দামও বেড়ে গেছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়ে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। জয়ত্রীর কেজি ৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। জানুয়ারিতে ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া জয়ফল ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দ্ইু সপ্তাহ আগেও ২০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে মসলাটি।

Comment here