রাজশাহীতেয ৪ ছেলেমেয়ের কেউ দেখে না, বাদাম বিক্রি করেই চলে বুড়োবুড়ির সংসার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজশাহীসমগ্র বাংলা

রাজশাহীতেয ৪ ছেলেমেয়ের কেউ দেখে না, বাদাম বিক্রি করেই চলে বুড়োবুড়ির সংসার

মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল রাজশাহী : ভোটার আইডি কার্ডে বয়স ৬৫ লেখা থাকলেও অনেক আগেই ৭০ পেরিয়েছেন ইউনুস আলী। রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে গেলেই তার দেখা মেলে। ওডভার মুনস্কগার্ড পার্কে ঢুকতেই হাতের ডানে মাটিতে বসে থাকেন। একটি বাশের ঝাঁকাতে বাদাম রেখে বিক্রি করেন।পদ্মাপাড়ে ঘুরতে আসা হাজারো মানুষের পানে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন ইউনুস আলী। তার চোখ যেন বলতে চায়, ‘নেবে নাকি একটু বাদাম?’। তার অব্যক্ত আহ্বানে বা প্রয়োজনেই কেউ কেউ কেনেন বাদাম। সেই বাদাম বিক্রির টাকাতেই চলে বৃদ্ধ ইউনুস আলী ও স্ত্রী মাজেদা বেগমের (৬০) সংসার।ইউনুস আলীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। তিন বছর হলো সেখান থেকে চলে এসেছেন। স্ত্রী মাজেদাকে নিয়ে থাকছেন রাজশাহীর বড়কুঠি এলাকায়।একসময় বেশ সুখেই ছিলেন ইউনুস আলী। জমিজমা, হালের গরু ও গুড়ের ব্যবসা ছিল তার। এগুলোর সবই খুঁইয়েছেন ব্যবসার লোকসানে। এরপর নানাভাবে টেনেছেন জীবনের চাকা। ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে মানুষ করেছেন।
বিয়ে করে তারা এখন সংসার করছেন। তারা ভালোই আছেন। কিন্তু কেউই বাবা-মাকে দেখেন না। তাই নিজের মতো করে বাঁচতে জন্মভূমি গ্রাম ছেড়েছেন ইউনুস আলী।বার্ধক্যে শরীরের শক্তি হারিয়ে গেছে। ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রির সামর্থ্য নেই। তাই বড়কুটি সংলগ্ন পদ্মা গার্ডেনের ভেতরে বসে থেকেই বাদাম বিক্রি করেন ইউনুস আলী। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বসে থেকে বাদাম বিক্রি করেন। এতে আয় হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। দিব্যি চলে যায় তাদের সংসার।তিনি বলেন, ‘দুই বছর হইলো এই ব্যবসা করতেছি। আমার জমি হারাইয়া গেছে ব্যবসা করতে গিয়া। বাধ্য হইয়া সংসারের হাল ধরতে হইচে এই কাজ করে। সেই থেকে এই ব্যবসাতেই আচি। এখানে আসার পর আয়-রোজগার মোটামুটি হইচ্চে, তাই আর ছেড়ে যাইনি। এখন আমরা দুই বুড়াবুড়ির চাহিদা কম, তাই সুকেই আচি।’ইউনুস আলী জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম বাদাম ২০ টাকায় বিক্রি করেন। করোনার কারণে বাদাম মানুষের আগের মতো বাদাম খান না। তাই বিক্রি হয় না বললেই চলে।তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সময় ভাতের পেছনে দৌড়াইতেছে মানুষ, বাদামের দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না।
তাই অনেক কষ্টে আচি। কারণ আমরা বাদাম বিক্রি কইরা ভাত খাই। আমাদের মতো অনেক হকারও কষ্টে আচে, তাগোও এমন অবস্থা!’তিনি বলেন, ‘বিক্রি নাই। এখন দিনে দু-তিনশ টাকার বাদাম বিক্রি করতেই অনেক কষ্ট হয়। আর করানোর আগে এক হাজার থেকে ১৫শ টাকার মতো বিক্রি করতাম।’সরকারি অনুদান বা বয়স্কভাতার কোনোটাই পাননি বৃদ্ধ ইউনুস আলী। বয়স্কভাতার কার্ড দেয়ার নামে তার কাছে তিন হাজার টাকা নিয়েছেন চেয়ারম্যান-মেম্বার। তারপরও কিছু করে দেননি। বয়স কমের দোহাই দিয়ে তাকে বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন ইউনুস আলী।ইউনুস আলী জানান, নিয়মিত বাদাম বিক্রি হলে এবং কোনো ধরনের ঋণ না থাকলে এভাবেই দিন কাটানো সম্ভব। আর কাজকে ছোট না ভেবে আপন করে নিলে ভালো উপার্জনও করা যায়।

Comment here