মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল রাজশাহী :রাজশাহী নগর সম্প্রসারিত হয়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন অভিজাত আবাসিক এলাকা। উঠছে চাকচিক্যে ভরা বহুতল ভবন। বেড়েছে জনপরিসর। অভিজাত সেসব কিছু এলাকাতেই এখন নারী দিয়ে পাতা হচ্ছে ফাঁদ। এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন নামিদামি ব্যক্তিরা। মধুচক্রে গিয়ে হচ্ছেন প্রতারণার শিকার। তারপরই বিষয়গুলো জানতে পারছে পুলিশ। অনেকে পুলিশকে জানাচ্ছেনও না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক শ্রেণীর সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ছাড়াও বিধিবদ্ধ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ টাকা কামাই করছেন এ শহরে। এসব সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাদের কারও কারও পরিবার থাকেন ঢাকায়।
একাকিত্ব কাটাতে এসব কর্মকর্তা নারী সঙ্গ ভোগের নেশায় ছোটেন। ঠিকাদার, অনুগত কর্মচারি, দালালেরা কাজ, সুবিধা ও নগদ টাকার লোভে তাদেরকে চিনিয়ে দেন নগরীর বিভিন্ন মধুচক্র। মোটা টাকার বিনিময়ে তারা উপভোগ করতে যান সুন্দরী নারীসঙ্গ ও নারীদেহ।
আর তখনই পড়েন ফাঁদে।নগর উন্নয়ন সংস্থার একজন বড় কর্মকর্তা বসবাস করেন রাজশাহীর অভিজাত পদ্মা আবাসিক এলাকায়। পরিবার থাকলেও এই কর্মকর্তা নারীসঙ্গ ভোগে পটু। অঢেল অবৈধ টাকার মালিক। এ কর্মকর্তা নগরীর পদ্মা আবাসিকের একটি মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন। সম্প্রতি সেখানে নারীসহ এ কর্মকর্তা আটকে পড়েন ফাঁদচক্রে। ফাঁদচক্রের হাতে ধরা পড়ে তার কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা টাকা। তবে এ কর্মকর্তা মান-সম্মানের ভয়ে পুলিশকে অভিযোগ দেননি।সদ্য বদলি হওয়া এক রেল কর্মকর্তাও নিয়মিত রাজশাহীতে একাধিক মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন। মধুচক্রের দালালদের তার অফিসেও দেখা যেত।
অফিসের লোকজনের মধ্যেও তার যৌন উন্মত্ততা ও মাদকাসক্তি নিয়েও কানাঘুষা ছিল। তিনি অফিস করতেন রাতে। তার সরকারি গাড়িতে প্রায়ই অল্প বয়েসী সুন্দরী তরুণীদের দেখা যেত। আবাসিক ভবনেও তিনি প্রায়ই সরকারি গাড়িতে করে নারী নিয়ে ঢুকতেন বলে জানা গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ কর্মকর্তার বেপরোয়া জীবনাচারের বিষয়টি অবগত হয়ে সম্প্রতি তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে।সম্প্রতি নগরীর উপশহরের একটি বাসায় রেলের একজন কর্মকর্তাকে নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিওচিত্র ধারণ, বিকাশে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া ও শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগে এক যুবক ও দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া থানার পুলিশ। তবে ভুক্তভোগী রেল কর্মকর্তা মধুচক্র থেকে ছাড়া পেয়েই পুলিশের কাছে যান। এ নিয়ে থানায় মামলা করেন তিনি।বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, যারা নারীদেহ ভোগের নেশায় মধুচক্রে যান তাদের অনেকেই এই ধরণের প্রতারণার ফাঁদে পড়েন। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকেই মোটা টাকা দিয়ে ছাড়া পেলেও পুলিশের কাছে আসে না অভিযোগ দিতে। ফলে পুলিশ এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে না। নানা পেশার মানুষ এসব মধুচক্রের খোঁজ পেয়ে সেখানে যান দালালদের মাধ্যমে। সেখানে নগ্ন নারীর সঙ্গে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। কেউ অভিযোগ করেন আবার কেউ টাকা দিয়ে রফাদফা করেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর অভিজাত আবাসিক উপশহর, পদ্মা আবাসিক, ভদ্রা, কলাবাগান, বিলসিমলা, নগরীর উপকণ্ঠ বায়া, নওদাপাড়া, আমচত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে মধুচক্র। আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে এসব এসব মধুকুঞ্জ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুন্দরী তরুণীদের রাজশাহীতে এনে আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে মধুচক্র গড়ে তুলেছে একাধিক চক্রটাকাওয়ালা উঠতি রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তারা এসব মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের। এসব মধুচক্রে গিয়ে যেমন নারীদেহ ভোগ করেন তারা, তেমনি অগ্রিম বুকিং দিয়ে নিজের আস্তানাতে নিয়েও তারা নারীদেহ ভোগ করেন। এক শ্রেণীর ঠিকাদারও সরকারি কোন দপ্তরের কর্মকর্তাকে সুন্দরী নারী পাঠিয়ে ঠিকাদারি কাজ হাতিয়ে নিচ্ছেন।খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, কিছুদিন আগে একজন সাব-রেজিষ্ট্রার নগরীর একটি মধুচক্রের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন। পরে চক্রের সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তরা নারীর সঙ্গে থাকা অবস্থায় ভিডিও করে তার কাছ থেকে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছাড়েন। তবে ওই সাব রেজিষ্ট্রার কোন অভিযোগ না করায় পুলিশ জানলেও কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
বিচার বিভাগের একজন কর্মকর্তাও মধুচক্রের এমন ফাঁদে পড়ে টাকা খুইয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ না করায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ। তবে তারা টাকা উদ্ধারসহ ফাঁদচক্রের কয়েকজনকে ধরে অন্য মামলায় চালান করেন।নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, রাজশাহীতে মধুচক্রের রমরমা কারবার চললেও সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় এগুলো পুলিশ খুব সহজে শনাক্ত করতে পারে না। ওই কর্মকর্তার মতে, অভিজাত এলাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে এসব মধুচক্র চলে। অনেক প্রভাবশালীরা এসব চক্রের পৃষ্টপোষকতা করেন।
আবার অনেক নামী-দামী লোকও এসব মধুচক্রের নিয়মিত যাতায়াত করেন। ফলে জানার পরেও প্রতিবেশি কিংবা অন্য কেউ এসব অপকর্মে বাধা দিতে পারেন না। পুলিশও অনেক সময় এড়িয়ে চলেন। তবে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রূহুল কুদ্দুশ বলেন, অভিজাত এলাকায় নানান কায়দা কৌশলে বাসা-বাড়িতে মধুচক্র চালানো হয় বলে অভিযোগ আছে। রাতে-দিনে অচেনা অপরিচিত মানুষদের আনাগোনা দেখে অনেকেই পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ অনেক সময় অভিযান পরিচালনা করে। মধুচক্র শনাক্তে মহানগর পুলিশ সাম্প্রতিক সময়ে নজরদারি বাড়িয়েছে। কারণ এসব মধুচক্রে নানান প্রতারণা এবং অপরাধও সংঘটিত হয়। এসব মধুচক্র শনাক্ত করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নগরীর থানা ও ফাঁড়িগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Comment here