মোঃআলাউদ্দীন মন্ডল : সারাদেশের মত রাজশাহীর চারঘাটেও করোনা ভাইরাসের কারনে হাঁট বাজার, জনসমাগম বন্ধ রয়েছে। জনসাধারণের চলাচলও একেবারে সীমিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় রিজিয়া বেওয়া(৬৫) নামের এক বৃদ্ধা গত দুই সপ্তাহ যাবৎ বাড়িতেই বসে রয়েছেন। আশেপাশের বাড়ির অনেকেই সরকারি বেসরকারি অনুদানের চাল ডাল পেলেও কিছুই জোটেনি রিজিয়ার কপালে।
জানাযায়, দীর্ঘ ৩০ বছর আগে স্বামী তাকে ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে। একমাত্র ছেলেও বিয়ে করে সন্তানসহ থাকেন চট্টগ্রামে। সম্বল বলতে চারঘাটের চাঁদপুর কাঁকড়ামারীতে ছোট খুপরি একটা ঘর। ভিক্ষা করে, মানুষের কাছে থেকে সাহায্য নিয়ে, অতি কষ্টে চলে রিজিয়ার একার সংসার। অনাহারী রিজিয়া অবশেষে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) সকালে তার নিজ এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তির কাছে যান অনুদানের তালিকায় নাম উঠাতে। সরকারী অনুদান চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হোন তিনি।
রিজিয়া বেওয়ার ছোট বোন আশরাফুন বেগম জানান, দুই তিনদিন যাবৎ রিজিয়ার ঘরে খাবার নেই। দেশের করোনা পরিস্থিতির কারনে ভিক্ষা করতে বের হতে পারে না। এ অবস্থায় সে মঙ্গলবার সকালে তার প্রতিবেশী বজলু ও নজমুলের বাসায় যায়। বজলু ও নজমুল এলাকায় চারঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক এবং ইউপি সদস্য নৈয়ব আলীর কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত। ইউনিয়নে পরিষদে যেকোনো সরকারী সাহায্য সহযোগিতা আসলে বজলু ও নজমুল ঐ এলাকার তালিকা তৈরি করে। এজন্যই স্থানীয়রা রিজিয়াকে বজলু ও নজমুলের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।স্থানীয় সুত্র জানায়,এলাকার লোকজনের কথা শুনে রিজিয়া বজলু ও নজমুলের বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে অনুদানের তালিকায় তার নামটা উঠাতে বলে। তিনি কোনো ভাতা কিংবা সরকারী অনুদান এখন পর্যন্ত পাননি, সেটাও জানান তাদের। এক পর্যায়ে বজলু এবং নজমুল রিজিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। জোর গলায় বলেন আমরা সরকারি অনুদান আমাদের নিজের আত্মীয় স্বজন ও নিজেদের ইচ্ছেমত দেবো তোর কতো বড় সাহস তুই বাসায় এসে ত্রান চাস। রিজিয়া গালি দিতে নিষেধ করলে বজলু ও নজমুল দুজন মিলে তাকে মারধর শুরু করে। মেহগনি গাছের ডাল দিয়ে রিজিয়ার মাথায়, হাতে ও পায়ে আঘাত করে। পরবর্তী তাদের আঘাতে রিজিয়া বেওয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসরুমা ইয়াসমিন বলেন, রিজিয়া বেওয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথায় ও হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। চিকিৎসা চলমান আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, বজলু কিংবা নজমুল আমার কাছের কেউ না। রিজিয়া বেওয়া এর আগে কোনো অনুদান পাননি এটা সঠিক। তবে তার নাম আমরা তালিকাভুক্ত করেছি, সে পরবর্তীতে সহযোগীতা পাবে।
এ বিষয়ে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সমিত কুমার কুন্ডু বলেন, এ বিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তাৎক্ষণিক অভিযুক্তের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। তারা পলাতক রয়েছে। তবে তাদের ধরতে আমাদের তৎপরতা চলমান আছে।
Comment here