রেমিট্যান্স কমছে স্বর্ণ সিন্ডিকেটে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

রেমিট্যান্স কমছে স্বর্ণ সিন্ডিকেটে

আবু আলী : বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্স। বৈধভাবে সোনা আমদানিতে উৎসাহ ও চোরাচালান বন্ধ করতে সরকার শুল্ক দিয়ে সোনার বার ও স্বর্ণালঙ্কার আনার সুযোগ দিয়েছে; কিন্তু শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আনা যে পরিমাণ সোনা জব্দ করা হয়েছে, তা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ সুযোগ দেওয়ার পরও অবৈধভাবে সোনা আসছে দেশে। আর যে পরিমাণ স্বর্ণ ধরা পড়ছে, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি আসে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা রেখে, এর পরিবর্তে স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণের বার দিয়ে দিচ্ছে। সেই স্বর্ণ সিন্ডিকেটের এ দেশীয় এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করেই প্রবাসীরা টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। মূলত চক্রটি বাংলাদেশে আগত প্রবাসীদের বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে। এ কাজে উৎসাহিত করতে নানা প্রলোভন দেওয়া হয়। কখনো বিমান টিকিট, কখনো কমিশন, আবার কখনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা দেওয়া হয়। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গোয়েন্দা সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর বদলে ব্যাগেজ রুলস কাজে লাগিয়ে সোনা আনায় ঝুঁকছে কেউ কেউ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলসে বৈধভাবে শুল্ক পরিশোধ করে এক ভরি স্বর্ণ এনে দেশে বিক্রি করলে প্রবাসীরা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মুনাফা করতে পারেন; কিন্তু বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে সেই পরিমাণ লাভ তারা পান না। তাই রেমিট্যান্সের বদলে সোনার বার আমদানির প্রবণতা বাড়ছে।

ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী এক ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ১০০ গ্রাম (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে শুল্ক-কর দিতে হয় না। এ ছাড়াও ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণবার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা করে শুল্ক দিতে হয়। সে অনুযায়ী স্বর্ণের বার আনলে ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। ১০০ গ্রামের (সাড়ে ৮ ভরি) অলঙ্কার আনার ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না থাকায় অনেক যাত্রী শুল্ক-কর দিয়ে বাড়তি অলঙ্কার সঙ্গে করে নিয়ে আসছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফেরত আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসেবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করে। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগের রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে।

এতে আরও বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে স্বর্ণ আনলে প্রবাসীরা কয়েকভাবে লাভবান হন। প্রথমত. কম দামে স্বর্ণ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। দ্বিতীয়ত. বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ব্যাংকের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছেন। তৃতীয়ত. রেমিট্যান্সের অর্থ পেতে প্রবাসীকে কোনো খরচ করতে হচ্ছে না।

সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ২৪ ক্যারেট প্রতিভরি স্বর্ণের দাম দেশ ভেদে ৫৮ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বিমানবন্দরে ২ হাজার টাকা শুল্ক দেয়ার পর স্থানীয় বাজারে সেই স্বর্ণ প্রতিভরি ৭২ থেকে ৭৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতিভরিতে মুনাফা হচ্ছে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ অঙ্ক আগের এপ্রিল মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। আর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় এবার ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্সে সবচেয়ে বেশি কমেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে, ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, কাতার থেকে ৫০ দশমিক ৭১ শতাংশ, কুয়েত থেকে ১৬ শতাংশ কমেছে। এসব দেশ থেকেই বেশি স্বর্ণ আসছে। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে ৪৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে ৫৭ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। এ দুটি দেশ থেকেও স্বর্ণ আনার ঘটনা ধরা পড়েছে।

ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে আসার ফলে অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমছে বা কমতে পারে। অন্যদিকে স্বর্ণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে সরকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

 

Comment here