লাইকি-বিগোতে ডায়মন্ড বিক্রি মাসে শতকোটি টাকা পাচার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

লাইকি-বিগোতে ডায়মন্ড বিক্রি মাসে শতকোটি টাকা পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক : লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘লাইকি’ ও ‘বিগো লাইভ’-এর ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ‘ডায়মন্ড’ বিক্রির মাধ্যমে দেশ থেকে প্রতিমাসে শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে এক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। অন্যরা হলেন- মোস্তফা সাইফ রেজা, আরিফ হোসেন, এসএম নাজমুল হক, আসমা উল হুসনা সেজুতী। গত শনিবার ও গতকাল রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, প্রাইভেট কার, ক্রেডিট কার্ড, চেক বই ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
সিআইডির উপ?মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) জামিল আহমেদ গতকাল রবিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানিয়ে যোগ করেন, সাপোর্টার বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করত, বিনিময়ে তাদের ডিজিটাল কয়েনসদৃশ ডায়মন্ড গিফট করা হতো। এ ডায়মন্ড টাকায় রূপান্তরের মাধ্যম বিপুল অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে চক্রটি। যুবসমাজ ও বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাই ছিল তাদের টার্গেট। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢুকত সাধারণ ব্যবহারকারীরা। গ্রেপ্তারকৃত বিদেশি নাগরিক বিগো লাইভ ও লাইকির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বাংলাদেশি নাগরিক মোস্তফা সাইফ রেজা বিগো লাইভের বাংলাদেশি অ্যাডমিন। আরিফ হোসেন বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়েদের মাসিক বেতনে চাকরি দিয়ে বিগো লাইভের সঙ্গে যুক্ত করতেন। এসএম নাজমুল হক ভার্চুয়াল মুদ্রা ডায়মন্ড বিক্রির অন্যতম প্রধান বাংলাদেশি এজেন্ট এবং আসমা উল হুসনা সেজুতী বিগো লাইভের প্রধান অ্যাডমিন। অ্যাডমিনরা মাসপ্রতি এক লাখ টাকা করে বেতন পেতেন।

লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ বিগো লাইভ ও লাইকিতে ডায়মন্ড বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করছে- এমন একটি
অভিযোগ সিআইডির সাইবার পুলিশের নজরে আসে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ প্ল্যাটফরমের বিভিন্ন অপরাধের তথ্য প্রকাশ হয়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির সাইবার পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে।

এতে জানা যায়, বিগো লাইভ ও লাইকিতে সাধারণত দেশের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন। বিগো লাইভ অ্যাপে দুধরনের আইডি রয়েছে। একটি ব্রডকাস্টার আইডি ও অন্যটি সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডি। ব্রডকাস্টার আইডি ব্যবহার করে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা ভিডিও লাইভ স্ট্রিম করেন। এই ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কথিত বিনোদনের আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেওয়া হতো। এ ছাড়াও সাপোর্টার আইডি বা সেন্ডার আইডির মাধ্যমে যারা ভিডিও স্ট্রিমিং করত, বিনিময়ে তাদের ডায়মন্ড গিফট করা হতো। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। এ জন্য ভার্চুয়াল মুদ্রা অর্থাৎ ডায়মন্ড কিনতে হয় ব্যবহারকারীদের। সাধারণত বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসসহ বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই ডায়মন্ড কেনা যায়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। যে যত বেশি অশ্লীলতা করে, সে তত বেশি ডায়মন্ড পেয়ে থাকে।

সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডায়মন্ড বিক্রির জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন নামে এজেন্সি রয়েছে জানিয়ে জামিল আহমেদ বলেন, এসব এজেন্সির প্রত্যেকের একাধিক পেমেন্ট গেটওয়ে রয়েছে। সাধারণত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব এজেন্সির বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এজেন্সির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে ডায়মন্ড কেনেন।
ডিআইজি জামিল বলেন, বাংলাদেশি লক্ষাধিক এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, ভার্চুয়াল মুদ্রা ও ব্যাংকের মাধ্যমে ডায়মন্ড কিনছেন। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রতিমাসে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকের নাম এসেছে এবং তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে প্রায় শতকোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সিআইডি এসব অ্যাপস বন্ধের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা এমন প্রশ্নে জামিল আহমেদ বলেন, লাইকি ও বিগো লাইভ অ্যাপস বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা নিয়ন্ত্রণকারীদের এসব বিষয়ে নজরে আনব। এ ছাড়াও আমরা এসব অ্যাপস সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যারা অশ্লীল ভিডিও দিচ্ছেন, তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব অ্যাপসের অফিস আমাদের দেশে খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। কোন কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা লেনদেন হয়েছে তা আমরা তদন্ত করছি। তবে তদন্তের স্বার্থে আপাতত এ চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর নাম বলা যাচ্ছে না।

Comment here