আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর দুই-এক দিন বিরতি নিয়ে লাগাতার আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে লাগাতার আন্দোলনে থাকতে পারে পদযাত্রা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে রাজপথে নামিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন সফল করতে চায় দলটি।
কর্মসূচি প্রণয়নে য্ক্তু থাকা এক বিএনপি নেতা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের প্রথম টার্গেট হলো- শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ সম্পন্ন করা। বাধাহীনভাবে এ মহাসমাবেশ করা গেলে এক-দুই দিনের বিরতি দিয়ে আন্দোলনে যাওয়ার সুযোগ আছে। এর মধ্যে সরকারের দিক থেকে নতুন কোনো উপসর্গ দেখা না দিলে অর্থাৎ মহাসমাবেশের ভেন্যু নিয়ে সরকারের দিক থেকে ঝামেলা না করলেই কেবল বিরতি দেওয়া হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে গত সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি নীতিনির্ধারকরা।’
মহাসমাবেশের ভেন্যু প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি তাদের (পুলিশ কর্তৃপক্ষ)। এখানে অনুমতি চাওয়ার কিছু নেই। এখানে পুলিশকে অবগত করতে হয়, সে অবগত আমরা করেছি। এখন তাদের দায়িত্ব, এখানে কীভাবে কী করবে না করবে, সেটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে রাজধানীতে তাদের অনেক নেতা সড়কে বসে পড়তে পারে বলে ক্ষমতাসীনরা ভয় পাচ্ছেন। গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সারাদেশে নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের শঙ্কা- নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের ভেন্যু নিয়ে জটিলতা তৈরি করতে পারে সরকার। সার্বিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে ঘন ঘন বৈঠক করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ও তার আগের রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা দুই দফা বৈঠক করেন। গত সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গেও বৈঠক করে বিএনপি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের সব মনোযোগ এখন ২৮ ঘিরে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা বলেন, ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করা গেলে আগামী ৩০ অথবা ৩১ অক্টোবর থেকে যুগপৎ ধারায় লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রথম কর্মসূচি সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা ঘোষণা করা হতে পারে।
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশ করতে চাই। মহাসমাবেশে জনতার স্রোত নামাতে চাই। লাখ লাখ মানুষকে নামিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই। তবে পরিস্থিতিই বলে দেবে, আমরা কী করব।’
গত ২৮ জুলাই নয়াপল্টনে ভারী বৃষ্টিতে ভিজে মহাসমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশে মহাসমাবেশ সফলের পর অনেক নেতাকর্মী ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এবারও সে ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। সেই যুক্তিতে আগামী ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর লাগাতার কর্মসূচি করার আগে এক-দুই দিনের বিরতি দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে গত রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার দলের একটাই পরিকল্পনা- ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করা। তিনি বলেন, বিএনপি বসে পড়বে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ অসত্য ও অপপ্রচার। আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের ঢাকায় এসে রাজপথে বসতে বলিনি। আমরা তাদের বলেছি- ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর সবাই নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যাবে।
বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি এমন কোনো কর্মসূচিতে যাবে না, যেখানে জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়াতে পারে। প্রতিটি কর্মসূচি ঘোষণার আগে সাধারণ মানুষ যেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, সে বিষয় মাথায় রেখে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
Comment here