লেগুনার হেলপার সেজে চার খুনিকে ধরলেন এসআই - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

লেগুনার হেলপার সেজে চার খুনিকে ধরলেন এসআই

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গত ২২ জানুয়ারি মহির উদ্দিন নামে এক মাছ ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়া যায়। নিহতের ছেলে লাশটি শনাক্তের পর এ ঘটনায় মামলা হয় যাত্রাবাড়ী থানায়। এর পরেই পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার এসআই বিলাল আল আজাদকে। শেষ পর্যন্ত অভিনব উপায়ে ছদ্মবেশ নিয়ে মহিরের ৪ খুনিকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আব্দুর রহমান, মঞ্জুর, রুবেল ও রিপন। তারা লেগুনা নিয়ে যাত্রী তুলে ছিনতাই করতো। এসআই বিলাল জানান, তদন্ত করতে গিয়ে টানা পাঁচদিন তিনি লেগুনার হেলপারের কাজ করেছেন তিনি। এ সময় পেশাদার হেলপারের মতো প্রতিদিন তিনশ টাকা আয় করতেন।

এসআই আজাদ বলেন, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে হানিফ ফ্লাইওভারে মহির উদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়। সেদিন সন্ধ্যায় তার ছেলে মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। মহির উদ্দিন কীভাবে মারা গেলেন তা জানতে পুলিশ ফ্লাইওভারে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে দেখা যায়, একটি চলন্ত লেগুনা থেকে ঘটনার দিন ভোরে মহিরকে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই লেগুনার কোনো নম্বর নেই। তবে সেটির পাদানিতে লাল রঙ রয়েছে। এরপরেই লাল রঙওয়ালা পাদানির লেগুনা খোঁজা শুরু করেন তিনি। পরিচয় গোপন করে এক দালালের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড,

কোনাবাড়ি, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি রুটের একটি লেগুনায় হেলপারের কাজ নেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই চালক হিসেবে কাজ করতে লেগুনা খুঁজতে শুরু করেন লাইনম্যানদের কাছে।

একজন লাইনম্যান এসআই বিলালকে জানান, ৭২৮ নম্বরের একটি লেগুনা রুটের সিরিয়ালে থাকলেও দুদিন ধরে সেটি দেখা যাচ্ছে না। সেটার খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে। লেগুনাটি কদমতলীর একটি গ্যারেজে আছে। সেখানে গিয়েই তিনি খুঁজে পান রং থাকা পাদানির সেই লেগুনাটি। সে সময় বিকল অবস্থায় লেগুনাটি গ্যারেজে পড়ে ছিল। এটির চালকের নাম ফরহাদ। এরপর ফরহাদকে খুঁজে বের করা হয়। তবে ফরহাদ দাবি করেন, ২১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি লেগুনা বুঝিয়ে দিয়ে মাদারীপুরে বাড়ি চলে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তার দাবি সঠিক।

আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরহাদ ঢাকা ছাড়ার পর ওই লেগুনা চালিয়েছিলেন মঞ্জু নামের এক চালক, তার হেলপারের নাম আব্দুর রহমান। এ সময় আব্দুর রহমানের বাবার ফোন নম্বর নিয়ে এসআই বিলাল নিজেকে লেগুনার চালক ও মালিক হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর বাবাই গত ২৬ জানুয়ারি ছেলে আব্দুর রহমানকে ডেকে আনেন। আব্দুর রহমানের মাধ্যম গ্রেপ্তার করা হয় মঞ্জুকে। মঞ্জু আর রহমান জানান, ২২ জানুয়ারি রাতে তাদের সঙ্গে রুবেল ও রিপন নামে আরও দুজন ছিল। পরে ধারাবাহিক অভিযানে কদমতলী থেকে তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, মহির উদ্দিনের কাছ থেকে ৫ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেয় আসামিরা। পরে ছিনিয়ে নেওয়া অর্থ থেকে ৭০০ টাকার তারা তেল কেনে। এরপর দুই হাজার টাকার ইয়াবা কিনে চারজনে মিলে সেবন করে এক হাজার টাকার নাস্তা করে। বাকি টাকা তারা ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।

 

Comment here