শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংহতি সমাবেশ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে ঢাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংহতি সমাবেশ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক : বিশ্ববিদ্যালয়, আবাসিক হলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা সংহতি সমাবেশ করেছে। আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান আসিফ নজরুল ও ফার্সি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু মুসা মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ। এ ছাড়া আন্দোলনে বিভিন্ন বিভাগের আরও ১৮ জন শিক্ষক সংহতি প্রকাশ করেছেন বলে জানান আন্দোলনের সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ মাহমুদ। এ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ১৫ মাস অতিবাহিত হলে ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে কোনো ধরনের রোডম্যাপ তৈরি করতে না পারার পেছনে প্রশাসনকে দায়ী করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।

ছাত্র-শিক্ষক সমাবেশের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবিতে স্লোগান দেন। পরে আগামী মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের ‘অকালমৃত্যুতে’ শিক্ষার্থীরা খাটিয়া মিছিলের ঘোষণা দেয়।

করোনার দোহাই দিয়ে আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না রেখে অতিদ্রুত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘দেশে অফিস-আদালত, গার্মেন্টস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, শপিংমল খোলা আছে, সবই খোলা আছে কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ কেন? আমি অনেক ভেবে দেখেছি, আসলে এর কারণ কি? এর কারণ মূলত দুটি। একটি হলো, সরকারের মধ্যে থাকা বৈষম্যের নীতি। সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশের সন্তান বিদেশে থাকে। যাদের পরিবার-পরিজনের কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু সমস্যা মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের। এদের প্রতি তাদের কোনো মাথাব্যথা নাই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, হাজার হাজার প্রাইমারি স্কুল বন্ধ আছে। তাদের প্রতি ক্ষমতাসীনদের যে নিষ্ঠুর আচরণ, সেটা বাংলাদেশের সংবিধানে যে বৈষম্যের নীতি আছে সেটার সাথে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ রাখার আরেকটি কারণ হলো, আমরা জানি “শিক্ষাই হলো জাতির মেরুদণ্ড”। কিন্তু দেশের সরকারের কাছে “শাষণই হলো জাতির মেরুদণ্ড”। তাই শাষণকার্যের জন্য যা প্রয়োজন অফিস-আদালত খোলা রাখা, শপিংমল খোলা রাখা, শাষণকে অব্যাহত রাখার জন্য যা দরকার সেটা হলে তাদের সমস্যা নাই। সমস্যা হচ্ছে রাজনীতি নিয়ে, শিক্ষা নিয়ে। এই দুটিকে স্টপ রাখতে পারলে সরকার নিরাপদ থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে সরকার যাই করুক তাতে কোনো প্রতিবাদ হবে না। এই প্রতিবাদ সরকারের শাষণ কার্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এই রকম সামান্য আশঙ্কা থেকেই তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। মনে হচ্ছে যদি সম্ভব হয়, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য তৈরি আছে। সবাই গোল্লায় যাক, আমরা ক্ষমতায় থাকি, নিরাপদে থাকি।’

ফার্সি বিভাগের শিক্ষক আরিফ বিল্লাহ বলেন, ‘সবকিছু খুলে দেয়া হয়েছে, এমনকি রেস্টুরেন্টও, সীমান্ত দিয়ে এখনো মানুষ আসছে, ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে, এই সবকিছু খোলা রেখা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, ৫% এর নিচে যখন সংক্রমণ হবে তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু যেভাবে খোলা আছে তাহলে তো ৫% এর নিচে কোনোদিন আসবে না। তাহলে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনোদিন খোলা হবে না।’

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘এখন করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাতে এই সরকারের ভূমিকা হিরক রাজার দেশের মতো ভূমিকা পালন করছে। “যত কম জানবে, তত কম মানবে, তাই এদের জানার পথ বন্ধ করে দিতে হবে”।’

নীলক্ষেত মোড়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবিতে নীলক্ষেত মোড়ে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, জুনের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে লাগাতার আন্দোলনে যাবেন তারা। রোববার ঢাকার এই সাত কলেজের একদল শিক্ষার্থী রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক ঘুরে নীলক্ষেত পেট্রোল পাম্পের সামনে সমাবেশ করেন।

সমাবেশে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছুই চলছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতেই করোনার দোহাই দেওয়া হচ্ছে। সেশনজট নিরসন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। আমাদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চতায় ফেলে তারা বার বার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পেছাচ্ছে।’

জুনের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়া হলে ‘আরও কঠোর’ আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সারাদেশের ছাত্র সমাজকে নিয়ে রাজপথ অচল করে দেওয়া হবে।’

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মারুফা প্রীতি বলেন, ‘আমাদের সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এমনিতেই সেশনজট পিছু ছাড়ে না। এর মধ্যে এই করোনাভাইরাস আমাদের শিক্ষাজীবনকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। দীর্ঘ সেশনজটের চিন্তা মাথায় নিয়ে শিক্ষার্থীরা আজ হতাশায় ভুগছে। দিনের পর দিন এভাবে আশ্বাস দিয়ে না রেখে সাফ বলে দিন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর খোলা হবে না। তাহলে আমরা যে যার মতো কর্মক্ষেত্রে নেমে যাব।’

 

Comment here