শুক্রবার শুরু হতে পারে এক দফার কর্মসূচি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

শুক্রবার শুরু হতে পারে এক দফার কর্মসূচি

ঢাকা সফররত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগেই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করতে পারে বিএনপি। সে ক্ষেত্রে আগামী শুক্রবার (১৪ জুলাই) থেকে শুরু হতে পারে কর্মসূচি। বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা একাধিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

এই এক দফায় থাকছেÑ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি।

advertisement

এক দফা আদায়ে কী কী কর্মসূচি ঘোষণা করা যায়, তা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত নিচ্ছেন। এ ছাড়া কয়েকদিন ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন।

গতকাল বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামীকাল বুধবার আলাদা আলাদা সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। আগামী দিনে আমরা আন্দোলনে যৌথভাবে এগিয়ে যাব। সব শক্তি যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে যোগ দিতে পারে এবং সবার সহযোগিতা চাইব আমরা। এ জন্য আমরা একটি যৌথ ঘোষণা দেব আগামীকাল।

আমীর খসরু বলেন, সরকার পতনের পরে একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন হবে। তাদের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যারা জয়ী হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ এখন পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে

রয়েছে উল্লেখ করে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষ এ সরকারের পরিবর্তন চায়। তারা রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন চায়। এ পর্যায়ে আমাদের চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা হবে ১২ জুলাই (আগামীকাল)। চলমান আন্দোলনকে নতুন স্তরে উন্নীত করা হবে জানিয়ে সাইফুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমাদের ঐকমত্য হয়েছে।

যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও চলমান পরিস্থিতিতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জামায়াতে ইসলামী আগামী ১৫ জুলাই সিলেটে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে দলটি বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৫ জুলাই থেকে দেশব্যাপী আড়াই মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ থেকে ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এর পর ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। গত ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেও এর পরের যুগপৎ কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীকে দেখা যায়নি।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনবিষয়ক ছয় সদস্যের তথ্যানুসন্ধানী মিশনের সঙ্গে দলটির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের কথা রয়েছে। ১৬ দিনের এ সফরে ইইউ প্রতিনিধি দলের কাছে বিএনপি এ বার্তা পৌঁছাতে চায় যে, সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত ধাপে নেমেছে। দেশের মানুষও তাদের সঙ্গে আছে।

বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার মানববন্ধন কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশ দিয়ে এক দফার কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এর পর পদযাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘ঘেরাও করার’ মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। গতকাল বিকালে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচির ব্যাপারে এমন ধারণা দেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে দলের স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে।

বৈঠকে জানানো হয়, এখন থেকে যুগপৎভাবে সব কর্মসূচি হবে। আগামীকাল বুধবার ১২ জুলাই এক দফার ঘোষণার সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে ৩১ দফার যৌথ ঘোষণাও দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। কিন্তু গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারও সমাধান হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে আগামীকালের সমাবেশ সফল করতে গতকাল রাজধানীতে মাইকিং করেছে বিএনপি।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তুমুল আন্দোলনের ফল নানা কারণে ব্যর্থ হয়েছে। এর পর আর সরকারকে চাপে ফেলতে পারেনি বিএনপি। কিন্তু গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকে মনে হচ্ছে সরকার কিছুটা চাপে পড়েছে। এ সুযোগটাই বিএনপি নিতে চাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন প্রশ্নে শক্ত অবস্থান নিলেও ভারতের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপির কাছে এখনো স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।

চলতি সপ্তাহে ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল। এ দলে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বাংলাদেশ সফরে মানবাধিকার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবপাচার, শ্রম সমস্যা ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। বিশেষ করে নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং দুই দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন উজরা জেয়ার।

দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, এসব বিষয় মাথায় নিয়েই এবার আন্দোলনের ছক সাজানো হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজপথে জনগণ নামিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে সতর্কতা আছে, কারণ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব সহিংস আন্দোলনকে সমর্থন করে না। আবার দেশে আওয়ামী লীগও দল হিসেবে দুর্বল নয়। তারা সরকারেও আছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

এক দফার যুগপৎ আন্দোলন ইস্যুতে গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং ড. রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চ ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর উপস্থিত ছিলেন। এসব বৈঠকে আরও ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও আবদুল আউয়াল মিন্টু।

গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকের জেএসডির আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জনসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদেন শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) প্রতিনিধি হিসেবে ফারুক হাসান, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মিয়া মশিউজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান, জে আবেদীন শিশির, সাদ্দাম হোসেন, মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ, তারেক রহমান, আরিফুর রহমান তুহিন, আবুল কালাম আজাদ, শেখ খায়রুল কবির, মো. তারেক রহমান ও মোহাম্মদ শামসুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। রেজা কিবরিয়া চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।

এলডিপির সঙ্গে বৈঠকের সময় দলের মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, নিয়ামুল বশির, এসএম মোরশেদ, অধ্যক্ষ সাকলাইন, মাহবুবুর রহমান, বিল্লাহ হোসেন মিয়াজী ও আবুল হাসেম উপস্থিত ছিলেন। লেবার পার্টির বৈঠকে দলের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এসএম ইউসুফ, আমিনুল ইসলাম রাজু, হিন্দুরতœ রামকৃষ্ণ সাহা ও খোন্দকার মিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আরেকটি অংশের নেতারা আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এবং গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জোট বিকাল তিনটায় গুলশানে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

Comment here