শুধু জানাজা পড়িয়েছে পিপিই পরিহিতরা, দাফন করল পরিবার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

শুধু জানাজা পড়িয়েছে পিপিই পরিহিতরা, দাফন করল পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ছাড়া চাচার কোলে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া এক শিশুর লাশ, পাশে আরও এক ব্যক্তি। আর তাদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে পিপিই পরিহিত কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়। গতকাল সোমবার করোনাভাইরাসে মারা যায় ওই শিশু। তার নাম আশরাফুল। শিশুটির মৃত্যুর পর আশপাশের দুই হাজার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পটিয়া কবরস্থানে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরিহিত চারজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। কাছেই করোনায় মারা যাওয়া শিশুটির লাশ কোলে একজন দাঁড়িয়ে। তার আশপাশে আরও একজন, যাদের কেউই পিপিই পরিহিত নয়।

ছবিতে লাশ কোলে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির নাম মো. টিপু। সম্পর্কে তিনি মারা যাওয়া শিশু আশরাফুলের চাচা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. টিপু বলেন, ‘সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে চারজন লোক দিয়েছিল। তারা পিপিই পরা ছিল। তবে তারা লাশের গোসল বা কবরে নামানোর ব্যাপারে কোনো সহায়তাই করেনি। শুধু জানাজা পড়া আর লাশ ধোয়ানোর বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে মাত্র। তাদের পরিবারের কেউ জানাজা বা লাশ ধোয়ানোর সময় পিপিই বা প্রতিরোধমূলক কোনো কিছুই পায়নি। শিশু আশরাফুলকে গোসল করানো, কবরে নামানো, দাফন-সবই তার বাবাসহ আমরা নিজেরাই করেছি।’

টিপু বলেন, ‘৬ বছরের শিশু আশরাফুল জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। সে হাঁটতে পারত না, এমনকি ভালোভাবে কথাও বলতে পারত না। অসুস্থ হওয়া, হাসপাতালে যাওয়াসহ সবসময় তার মা, বাবা, দাদি আর খালা পাশে ছিল। যদি শিশু আশরাফুল করোনায় মারাই যায়, তাহলে অন্যদের যা ক্ষতি বা করোনা সংক্রমণ তা তো আগেই হয়ে গেছে।’

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা জাহান উপমা দাবি করেছেন, শিশুটির মৃত্যুর পর মা, বাবাসহ পরিবারের চারজনকে পিপিই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সেগুলো ব্যবহার করেননি। শিশুটির পরিবারের বক্তব্য ছিল, করোনা সংক্রমণ যদি হয় তা আগেই হয়ে গেছে, এখন আর কী হবে!

এর আগে গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি আমাদের সময়কে জানান, ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুটি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসার পর রোববার মধ্যরাতে হাসপাতালে আনা হয়। রাত আড়াইটায় শিশুটির মৃত্যু হয়।’

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজেটিভ আসার পর গতকাল রাতে শিশুটিকে চট্টগ্রাম হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় ওই শিশুসহ মোট ৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

এদিকে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুসারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হবে। এছাড়া জানাজা ও দাফনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত এই শিশুটির ক্ষেত্রে এর কোনোটাই মানা হয়নি।

Comment here