সাবধান! গুজবে কান নয় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সাবধান! গুজবে কান নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘গুজব থেকে সাবধান, গুজব একটি সামাজিক ব্যাধি, তা থেকে নিজে সচেতন থাকুন, অন্যকে সতর্ক করুন’- গুজবে বেশ কয়েকটি ‘অঘটন’ ঘটার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের স্ট্যাটাস দেখা গেছে। জনগণকে সচেতনতায় সরকারকে নিতে হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে গত কিছুদিন ধরে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সরকারি ঘোষণার আগেই দেশে করোনা রোগী পাওয়া গেছে এমন গুজবও আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল। গতকাল রবিবার করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণার পর আরও গুজব ছড়ানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা সবাইকে সচেতন থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।

গুজবের বিষয় এলে বাংলায় একটি প্রবাদ সামনে আসে, তা হলো- ‘চিলে কান নিয়ে গেছে।’ কিন্তু কানে হাত না দিয়েই চিলের পেছনে দৌড় শুরু করেন ওই ব্যক্তি। প্রবাদটি মনে করে দিয়ে অনেকে বলছেন, কিছু শুনলেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা নিকটাত্মীয়দের জানিয়ে গুজব সৃষ্টি করবেন না। আগে বিষয়টি যাচাই করুন।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে ইরানে একটি হাসপাতাল জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। কোথাও কোথাও মৃত্যুর খবর বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। এই রোগে আক্রান্তের মৃত্যুর হার অনেক কম হলেও এমনভাবে বলা হচ্ছে যেন এই রোগে আক্রান্ত হলেই মৃত্যু।

বাংলাদেশে গুজব ছড়িয়ে তুঘলকি কাণ্ড ঘটে যাওয়ার অনেক নজির আছে। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে হৈচৈ পড়ে। অনেকেই বলে থাকেন, এটি ছিল পরিকল্পিত গুজব। ২০১২ সালে পবিত্র কোরআনের অবমাননা করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের উপাসনালয় ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

গুজব আগেও ছিল, এখনো আছে। শুধু তফাত ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে পড়ে অত্যন্ত দ্রুত। ইন্টারনেটের সুযোগ আছে এমন যে কেউ যে কোনো সময় মিথ্যা খবর ছড়াতে পারে। তাই সবাইকে কারোনার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। যে কোনো খবর শুনলে তা সত্যতা যাছাই করতে হবে আগে।

কয়েকদিন আগে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বিবিসি বাংলাকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে পড়ছে, যেগুলো জনমনে আতঙ্ক তৈরি করছে। যেমন ফেসবুকে আমি একটি পোস্ট দেখলামÑ ভারতে ২ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। অথচ সত্যিটা হলো কেরালা রাজ্যে তিনজনের মধ্য ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। আর ২ হাজার জন চীন থেকে ফিরেছেন, তাদের কেবল পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারা কেউ আক্রান্ত নন। তাই গুজবে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।

বাংলাদেশিদের মধ্যে গুজবে কান দেওয়ার প্রবণতাটা একটু বেশিই বলা যায়। অতীতের কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে তা-ই প্রমাণ হয়। নইলে এ যুগে ‘ছেলে ধরা’ অভিযোগে ঢাকায় এক নারীসহ সারাদেশে সাতজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার চেয়ে বড় ঘটনা হলো, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে। এ কথায়ও বিভ্রান্ত হয়ে বাড্ডায় প্রথম রেনু নামে এক নারীকে পিটিয়ে মারা হলো।

অতীতের বিষয়গুলো মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কারও কথায় কান দিয়ে চিলের পেছনে দৌড়ানো যাবে না। আগে দেখতে হবে কানের জায়গায় কান আছে কিনা।

Comment here