স্কুলে উপস্থিতি কমেছে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

স্কুলে উপস্থিতি কমেছে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের

এম এইচ রবিন : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি কমে গেছে। দেখা দিয়েছে পুষ্টির ঘাটতি। নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শিশুদের লেখাপড়ার মানে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের নতুন একটি প্রকল্পের সম্ভাবতা যাচাই চলছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর সেটা চালু হতে পারে।

দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় সরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতে ‘স্কুল ফিডিং’ কার্যক্রম চালু করে সরকার। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমানোসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্য ছিল এ প্রকল্পের। ২০১০ সালে চালু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে কয়েক দফা। তবে গত জুনের পর থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর প্রভাবে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে প্রতিদিনের খাদ্য

তালিকা আমূল পরিবর্তন এসেছে। অনেক পরিবারে নিয়মিত খাদ্য তালিকা থেকে ডিম পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবারে পুষ্টি ঘাটতি নিয়ে বড় হচ্ছে শিশুরা।

গত বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে করোনাকালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অতি দারিদ্র্য। তিন গুণ বেড়ে এটি এখন হয়েছে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ২ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়। দারিদ্র্যর মুখোমুখি ৫৬ শতাংশ পরিবার দাবি করেছে, করোনার সময় তাদের আয় কমেছে। ধার করে, সঞ্চয় ভেঙে এবং খাদ্য ব্যয় কমিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করেছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেখানে ধার করে সংসার চালাচ্ছেন, সেখানে দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারটি মাথায়ই রাখেনি। এসব দরিদ্র পরিবারের অনেক সন্তানের জন্য স্কুলে দুপুরে এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা অনেক বড় বিষয়। এখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা।

শিক্ষকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দরিদ্র পরিবারে শিশুদের পুষ্টির জোগান কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কুল ফিডিং প্রকল্প চালু থাকলে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা পুষ্টিহীনতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এ প্রসঙ্গে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, স্কুল ফিডিং থেকে তিন ধরনের লাভ হয়। শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। এর বাইরে শিশুদের ঝরে পড়ার হার কমে এবং খাদ্য বিতরণের কারণে স্কুলে এক ধরনের আনন্দ তৈরি হয়। এতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ফল বাড়ে। স্কুল ফিডিং না থাকলে প্রাথমিকে এই তিনটি জিনিস হারিয়ে যাবে।

বেসরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ময়মনসিংহের পলাশতলী বৈল্লার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু অবস্থায় জুনে উপস্থিতি ছিল শতভাগ। সেপ্টেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশে, পলাশতলী বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ থেকে সেপ্টেম্বরে নেমেছে ৯০ শতাংশে। জামালপুরের ছালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৮ থেকে ৫৫ শতাংশ ও বজরা তবকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮১ থেকে উপস্থিতি নেমেছে ৬৫ শতাংশে। কুড়িগ্রামের মিয়াজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জুনে স্কুল ফিডিং চলাকালীন উপস্থিতি ছিল ৭৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে নেমেছে ৬৩ শতাংশে। একই জেলার উত্তরপান্ডুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন মাস আগের ৮১ শতাংশ থেকে উপস্থিতি নেমেছে ৭০ শতাংশে। এ ছাড়া দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৭ থেকে নেমেছে ৭৩ শতাংশে, বুড়াবুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৯ থেকে ৭৭ শতাংশে।

স্কুল ফিডিংয়ের বন্ধ প্রকল্প ফের চালু প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রাথমিক ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে নতুন প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইমূলক প্রতিবেদন দিতে। এজন্য বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে ডব্লিউএইচও এবং ডিপিই আলাদাভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু করেছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে নতুন করে ডিপিপি তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আশা করি আগামী অর্থবছর থেকে নতুন করে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।’

স্কুল ফিডিং প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০৪ উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ বিস্কুট এবং মিড-ডে মিল কার্যক্রমের আওতায় ১৬ উপজেলায় দুপুরে রান্না করা খাবার বিতরণ করে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের রান্না করা গরম খাবারসহ অন্যান্য খাবার দিতে জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা-২০১৯ ইতোমধ্যে পাস হয়েছে। এর আলোকে পাঁচ বছরের জন্য শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার হিসেবে খিচুড়ি দিতে ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এটি ২০২১ সালের ১ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কিছু অনুশাসন দেন। এর পর শুরু হয় নতুন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই।

 

Comment here