বেসরকারি ঋণে হঠাৎ ছন্দপতন - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

বেসরকারি ঋণে হঠাৎ ছন্দপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা হোঁচট খেলেও মার্চে থেকে টানা বাড়ছিল। তবে সেপ্টেম্বরে এসে আবার ছন্দপতন হয়েছে। গত মাসে এ খাতে বার্ষিক ঋণপ্রবৃদ্ধি কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ আগের মাসে এ খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ অতিক্রম করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আমদানি ব্যয়ে লাগাম ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি-সুদহার বৃদ্ধির পদক্ষেপে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে থাকতে পারে।

চলতি অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির সীমা নির্ধারণ করা আছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর বিপরীতে গত অর্থবছরে অর্জন হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছিল। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণেও ছিল হতাশার চিত্র। মহামারী করোনার নেতিবাচক প্রভাবে এ খাতের প্রবৃদ্ধি আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর এ খাতের ঋণে বেশ গতি ফিরতে দেখা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রায় চার বছর পর গত আগস্ট মাসে এ খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ওই মাসে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৩ শতাংশের ঘরে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১২ লাখ ১০ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। ফলে গত এক বছরে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত জুলাইতে এ খাতে বার্ষিক ঋণপ্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনার প্রথম ঢেউয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এর পর মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২০২১ সালের মে মাসে তা একেবারে তলানিতে নেমে যায়। ওই মাসে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় মাত্র ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় ২০২০-২১ অর্থবছরের জুন থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ওই অর্থবছরে জুনে বেসরকারি ঋণের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয় ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর পর ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাইতে তা ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, আগস্টে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ, অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ, নভেম্বরে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, ডিসেম্বরে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ ও জানুয়ারিতে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে ওঠে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। তবে এর পর থেকে আবার টানা বাড়ছে বেসরকারি খাতের ঋণ। চলতি বছরে মার্চে তা ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ, এপ্রিলে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মে মাসে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ও জুনে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে তা আরও বেড়ে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে উঠেছে। এটি গত সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ ছিল। তবে এর পর থেকেই কমতে থাকে ঋণের প্রবৃদ্ধি।

 

Comment here