স্বপ্ন যাবে বাড়ি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

স্বপ্ন যাবে বাড়ি

আরেকটু ভালো থাকার স্বপ্ন নিয়ে যারা ঘর ছাড়েন, তাদের কাছে ঈদ ঘরে ফেরার বড় এক উপলক্ষ। ঈদুল ফিতরের পর সেই উপলক্ষ হয়ে আবার সামনে এসেছে ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে স্বজন ও চিরচেনা মাটির গন্ধ পেতে বাড়ির পানে ছুটতে শুরু করেছে মানুষ। তবে ‘স্বপ্নের’ বাড়ি ফেরাটা মোটেও মসৃণ নয়। টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছানো পর্যন্ত নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়কপথে যানজট, রেলপথে সময়সূচির বিপর্যয় ও নৌপথে নানা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মানুষ ছোটে নাড়ির টানে।

ঈদযাত্রা শুরু হয় মূলত গত সোমবার দুপুর থেকে। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ছিল এদিন। তাই সকালে অফিসে হাজিরা দিয়েই মানুষ বের হন বাড়ির উদ্দেশে। যাত্রার শুরুতেই যানজটের মুখে পড়েন অনেকে। কোরবানির পশুর হাটের আশপাশের সড়কগুলোয় যানজট ছিল বেশি।

এবারও বেশির ভাগ মানুষ ঘরে ফিরবেন সড়কপথে। রেল ও নদীপথের যাত্রীও কম নয়। যারা বাসে যাবেন, তারা প্রথমেই ছুটছেন সায়েদাবাদ, গাবতলী বা মহাখালী টার্মিনালের দিকে। গতকাল বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই রিকশা বা সিএনজি নিয়ে বাস টার্মিনালে যান।

রাজধানীর মতিঝিল ও দৈনিক বাংলা মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার অনেকে দুপুরের মধ্যেই অফিস শেষ করে বাড়ির পথে রওনা হচ্ছেন। তারা বলেছেন, একদিন আগে গেলে একটা দিন বেশি সময় কাটাতে পারবেন স্বজনদের সঙ্গে।

advertisement…

এদিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে ট্রেনের ঈদযাত্রা এখনো স্বস্তির। গাবতলী, কল্যাণপুর, সদরঘাট, সায়েদাবাদ সর্বত্র দেখা গেছে মানুষের স্রোত। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন, বিকালের দিকে সড়কে একটু চাপ বেড়েছে। রাতে হয়তো আরও বাড়বে।

রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির জানান, এবার ঈদে ২৪ থেকে ২৮ জুন প্রতিদিন ৪১ জোড়া আন্তঃনগর এবং ৩৬ জোড়া মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে ঢাকা নদীবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নৌপথে স্বস্তিতে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সোমবার অফিস ছুটির পর সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, বরিশালগামী লঞ্চগুলোতে ডেক যাত্রীদের ভাড়া ৫০০ টাকা, সিঙ্গল কেবিন ১৫০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২৫০০ টাকা ও ভিআইপি কেবিন ৭০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

গতকাল সন্ধায় খবর নিয়ে জানা গেছে, অন্তত ১০০ লঞ্চ ছেড়ে গেছে। অন্য সময়ে এ সংখ্যা ৬৫টির বেশি।

এদিকে পদ্মা সেতু হওয়ায় ভোগান্তি ছাড়াই সড়কপথে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। আগে পদ্মা পাড়ি দিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো ফেরিঘাটে। এখন ৮ থেকে ১০ মিনিটেই পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা সেতু।

গাবতলীতে দেখা যায়, বাস না পেয়ে মানুষ বাইক ও পিকাপ ভ্যানে করে গাবতলী থেকে নবীনগর যাচ্ছেন।

আকাশপথেও টিকিটের চাহিদা আছে। অনেকে আবার মোটরসাইকেলে ঝুঁকি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে রওনা হয়েছেন। ফেরিঘাটে গতকাল ছিল ব্যাপক চাপ। এ ছাড়া মহাসড়কগুলোর কিছু কিছু স্থানে যানজট তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) হিসাবে, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এ জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দুই ঈদে গ্রামে যান।

ফেরিঘাটে দীর্ঘ অপেক্ষা, সড়কপথের যানজট, ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব, লঞ্চের উপচেপড়া ভিড় যাত্রাপথের এসব ভোগান্তি ঈদযাত্রায় বাধা হতে পারে না। সারা বছর ঢাকায় থাকলেও ঈদের সময় আত্মীয়-পরিজনের অপেক্ষাকে মানুষ উপেক্ষা করতে পারে না।

ঈদ উপলক্ষে সাভারের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। নবীনগর-চন্দ্রা, আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের প্রতিটি পয়েন্টেই রয়েছে যানবাহনের চাপ।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর, নয়ারহাটসহ কয়েকটি পয়েন্টে রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়া, জিরাবো, জামগড়া ও বাইপাইলের সড়কগুলোতে রয়েছে একই চিত্র। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পল্লীবিদ্যুৎ, ডিইপিজেড, শ্রীপুর ও জিরানীতেও রয়েছে যানবাহনের জটলা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সড়কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে অনেকেই ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান না। এ সংখ্যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে বেশি। পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বেশির ভাগ ঈদেই ছুটি মেলে না। যাওয়া হয় না পরিবারের কাছে। দেশের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে এ কষ্টটুকু হাসিমুখেই মেনে নিই।’

এ ছাড়া মানুষের নিরাপত্তায় নৈশপ্রহরী বা দারোয়ানেরও বড় অবদান আছে। প্রতিবারের মতো এবারও অনেকেই বাড়ি যেতে পারবেন না। নিউ মার্কেট এলাকার নৈশপ্রহরী জাকির হোসেন বলেন, ‘যে পেশাতে আছি, এখানে স্বাদ-আহ্লাদ রেখে লাভ নেই। এবারের ঈদে খরচ বেশি। তাই ঈদের ডিউটি করে যা আয় করব, বাড়িতে পাঠাব।’

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে খুব অল্পসংখ্যক সদস্য ছুটি পান। রাজধানীতে এবারও ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।’

Comment here