লাখের নিচে মিলছে না মাঝারি আকারের গরু - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

লাখের নিচে মিলছে না মাঝারি আকারের গরু

ঈদের বাকি আর মাত্র এক দিন। শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু কিনতে হাটে ছুটছেন রাজধানীবাসী; কিন্তু পছন্দের সঙ্গে দামে মিলাতে পারছেন না। গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় কোনো কোনো বেপারি কিছু গরু কম দামে ছেড়ে দিলেও মাঝারি আকারের গরু এখনো লাখ টাকার নিচে মিলছে না। মাত্রাতিরিক্ত দাম হওয়ায় বড় গরুতে আগ্রহ কম ক্রেতাদের। গতকাল হাটে ক্রেতা সমাগম কয়েক গুণ বাড়লেও কাক্সিক্ষত বিক্রি নেই। এদিকে ঈদ ঘনিয়ে আসায় পশু বিক্রি করতে নির্ঘুম সময় পার করছেন বেপারিরা।

গতকাল রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকার পশুর হাট ঘুরে দেখা যায় মাঝারি ও বড় গরুর সংখ্যাই বেশি। চাহিদার শীর্ষে রয়েছে মাঝারি গরু; কিন্তু এসব গরুর দাম পড়ছে ১ লাখ ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে। সামান্য বড় আকারের গরুর দাম পড়ছে দেড় থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অপরদিকে বড় গরুর দাম পড়ছে ছয় থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত।

ফরিদপুর থেকে আশা গরুর বেপারি মো. হামিদ মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ায় ক্রেতা কম হাটে। কালকের চেয়ে আজ গরুপ্রতি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কম লাভে ছেড়ে দিচ্ছি। তবু বিক্রি করতে পারছি না। মাঝারি দুইটা গরু আছে আমার। এগুলো প্রতিটা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পেলেও ছেড়ে দেব ভেবেছি; কিন্তু ক্রেতারা ৮০-৮৫ হাজার টাকার বেশি দাম বলছেন না।’ কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক বেপারি মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, গতকাল থেকে দিনরাত না ঘুমিয়ে বিক্রির চেষ্টা করছি; কিন্তু কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারছি না।

গরু কিনতে আসা মাতুয়াইল তুষারধারা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এনামুল হক বলেন, এক লাখের নিচে মাঝারি গরু পাওয়াই যাচ্ছে না। আরেক ক্রেতা মো. ইলিয়াস বলেন, ৬০-৭০ হাজার টাকায় গরুই মিলছে না। সব গরু লাখ টাকার ওপরে। আর যেগুলোর দাম ৭০-৭৫ হাজার টাকা বলছে, সেগুলো একেবারেই ছোট বাছুর।

advertisement…

একই চিত্র দেখা গেছে আশেপাশের শনিরআখড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি হাটেও। সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ায় রাস্তার ধারে বেঁধে রাখা তুলনামূলক ছোট গরুর বেপারিরা একটু কম দামে বিক্রি করেছেন। তবে মাঝারি গরুর দাম এসব হাটেও চড়া।

সকালে বৃষ্টির মধ্যেই শনিরআখড়া হাটে হাতের শেষ গরুটি বিক্রি করেন কুষ্টিয়ার বেপারি মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, মোট ৮টি ছোট গরু এনেছিলেন। ৭টি আগেই বিক্রি হয়েছে। ‘গতকাল শেষটির দাম ৭০ হাজার বলার পরও ছাড়িনি। আজ বৃষ্টি হচ্ছে দেখে ৬৪ হাজারে বিক্রি করে দিয়েছি।

বাড়ি যাব, তাই কমেই ছেড়ে দিয়েছি’- বলেন তিনি।

বৃষ্টিতে ভিজে হাট ঘুরেও বাড়তি দাম শুনে আক্ষেপ করেন অনেক ক্রেতা। এ রকম এক ক্রেতা রায়েরবাগের জনতাবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম বলেন, যে গরুগুলো ১ লাখ ২০-৩০ হাজার চাচ্ছে সেটা বেশি দাম হলেও ৮০-৯০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। হাতে বাকি মাত্র এক দিন, অথচ বেপারিরা দাম কমাচ্ছেনই না। বৃষ্টিতেও মাঝারি গরুর দামে হেরফের নেই।

গতকাল শনিরআখড়া হাটে পশুর বেচাকেনা বাড়লেও বড় গরুর ব্যবসায়ীদের মুখ ভার দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গার বেপারি মো. আজগর আলী বলেন, ‘তিন দিন হলো গরু নিয়ে বসে আছি। গরুর খাবারের খরচ, নিজের খরচ; কিন্তু ক্রেতারা বড় গরুতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, দুশ্চিন্তায় আছি। আরেকটু দাম পেলেই আজকে ছেড়ে দেব ভাবছি।’

গোখাদ্যের দাম লাগামহীন হওয়ায় এই বছর গরুর দাম বেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, এক বছরে গোখাদ্যের দাম প্রকারভেদে ৫০ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গমের ভুসির বস্তা এক বছরে (৩৭ কেজির বস্তা) দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২৩০০-২৪০০ টাকা হয়েছে। সয়া কেকের দামও কেজিতে প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে ৮৪-৮৫ টাকা হয়েছে। এরকম সব খাবারের দাম বেড়েছে। এবার হাটগুলোতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়তি রয়েছে।

সরকারি হিসাবে চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসাবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু থাকলেও দামে স্বস্তি মিলছে না এবার। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারিরা বলছেন, এ বছর কোরবানির পশুর দাম গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি রয়েছে।

Comment here