হাজী সেলিমের দখল থেকে জমি উদ্ধার করল অগ্রণী ব্যাংক - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

হাজী সেলিমের দখল থেকে জমি উদ্ধার করল অগ্রণী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ হাজী মো. সেলিম ১৯৯৬ সালের আগে ছিলেন চকবাজার এলাকার বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কমিশনার। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান তিনি। না পেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। এরপর নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভও করেন। এর পরই লালবাগ, চকবাজার ও হাজারীবাগ এলাকায় গড়ে তোলেন তার একচ্ছত্র আধিপত্য। সেই আধিপত্যের জের ঘরেই গত ১০ বছর দখল করে রেখেছিলেন অগ্রণী ব্যাংকের পুরান ঢাকার মৌলভিবাজারের করপোরেট শাখার ২০ শতক জমি। গত সোমবার ওই জমি উদ্ধার করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, পুরান ঢাকার ৭৮/১ মৌলভিবাজারের ওই জমি সোমবার দখলে নেয় অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার থেকে সেখানকার ইট সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করলেও ওই স্থানে কাজ শুরু হয়নি। এর আগে অবৈধ দখলকারীরা অগ্রণী ব্যাংকের করপোরেট শাখার দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়।

অগ্রণী ব্যাংকের হেড অব সিকিউরিটি প্রটোকল মেজর (অব.) মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, স্ত্রী গুলশান আরার নামে জাল দলিল বানিয়ে সরকারি জমি দখল করে নিয়েছিলেন সাংসদ হাজী সেলিম। জমিতে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের দোতলা ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে থাকা ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র গায়েব হয়ে গেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরকারি জমিটি উদ্ধারে একটি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ১০ বছর পর সোমবার রাতে জমিটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

আসাদুজ্জামান বলেন, উদ্ধারকৃত জমির চারদিকে পাকা সীমানা দেয়াল বানিয়ে ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করে এর নিরাপত্তায় আনসার মোতায়েন করা হবে।

এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে পুরান ঢাকার ৭৮/১ মৌলভিবাজারের জমিটি উদ্ধারে চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব-৩) টিকাটুলী কার্যালয়ে আবেদন করা হয়। ঢাকার যুগ্ম দায়রা জজ আদালতে মামলাও করা হয়েছে।

জিডিতে বলা হয়, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড রাষ্ট্র মালিকানাধীন দেশের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৪৭ সালের তৎকালীন হাবিব ব্যাংক, যা ১৯৭২ সাল থেকে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড মৌলভিবাজার করপোরেট শাখা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বর্তমান ব্যাংকের গুদামঘর ও লকার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও অর্থসম্পদ সংরক্ষিত আছে।

চকবাজারের বড় কাটরার বাসিন্দা হাজী মো. সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ৭৮/১ মৌলভিবাজারের মালিকানা দাবি করে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছেন এবং রাতের বেলা ভবনের প্রাচীর ভেঙে ভবনের ভেতরে ঢোকার পাঁয়তারা করছেন। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন, যা রাষ্ট্রমালিকানাধীন তথা অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের গোডাউন ও লকারে থাকা সম্পদের নিরাপত্তা জন্য হুমকিস্বরূপ। গুলশান আরা সেলিম ও স্বামী হাজী সেলিমের লোকজন ৭৩ বছর ব্যাংকের দখলে থাকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখল করে সেখানে স্থাপনা তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে জেলা যুগ্ম জজ আদালতে মামলা বিচারাধীন।

চলতি বছরের ২০ মে জিডিটি করেন অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের মৌলভিবাজারের করপোরেট শাখার প্রধান সহকারী মহাব্যবস্থাপক বৈষ্ণব দাস মণ্ডল। র‍্যাবের কাছেও তিনিই আবেদন করেন।

এসব ব্যাপারে জানতে হাজী সেলিমের সঙ্গে যোগযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এমনকি তার বাসায়ও কথা বলার মতো দায়িত্বশীল কেউ নাকি নেই। তবে জানা গেছে, র‌্যাবের অভিযানের পর সোমাবার রাত ১০টার দিকে হাজী সেলিম বাসায় ফেরেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। কোথায় গেছেন কেউ বলতে পারছেন না।

 

Comment here