১০ হাজার রাজাকারের নাম জানা যাবে ১৫ ডিসেম্বর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

১০ হাজার রাজাকারের নাম জানা যাবে ১৫ ডিসেম্বর

ইউসুফ আরেফিন : বাঙালির গৌরবের ৪৯তম বিজয় দিবস উদযাপিত হতে যাচ্ছে মাত্র কয়েক দিন পর। আসছে ১৬ ডিসেম্বর দেশবাসী তাদের বীর শহীদদের স্মরণ করবে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। এদিন স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী পাকিস্তানি দোসর রাজাকারদের ঘৃর্ণা জানাবে পুরো জাতি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবার বিজয় দিবসের আগেই সেই দেশদ্রোহী রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ দিয়েছে।

নতুন প্রজন্মকে জানানোর তাগিদ থেকেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিজয় দিবসের আগেই পুরো তালিকা প্রকাশ করতে পারছে না মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ ডিসেম্বর দেশের ৪৯ জেলা থেকে প্রস্তুত করা তালিকার আংশিক অর্থাৎ ১০ হাজার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আমাদের সময়কে বলেন, আমরা রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছি। এবার আশা করি আর ব্যত্যয় ঘটবে না। বিজয় দিবসের আগের দিন অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ১০-১৫ হাজার রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে পারব আশা করি। তবে পর্যায়ক্রমে আমরা পুরো দেশের রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করব।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এসএম আরিফুর রহমান নিজ দপ্তরে আমাদের সময়কে বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে তালিকা প্রকাশ করাটা কষ্টকর। মন্ত্রী মহোদয় যেহেতু তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন, সেহেতু হয়তো কিছু রাজাকারের নাম প্রকাশ করা হতে পারে। তবে এ সংখ্যাটা খুবই কম। বিজয় দিবসের ব্যস্ততার কারণে খুব বেশি তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা রাজাকারের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি সচিবের নজরে আনলে তিনি বলেন, তা হলে নির্মূল কমিটি আমাদের সহায়তা করতে পারলে তো ভালো। আমরা অবশ্যই তাদের সহযোগিতা নেব।

মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, ইতোমধ্যে ৪৯ জেলায় রাজাকারের তালিকা করা হয়েছে। এসব জেলার প্রত্যেক উপজেলায় রাজাকার আছেন। তবে সংখ্যা খুবই কম। কোনো কোনো জেলা কিংবা উপজেলায় মাত্র দু-একজন রাজাকার আছেন। এই সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, স্থানীয় নানা রাজনীতির কারণে কোথাও কোথাও রাজাকারের সংখ্যা বেড়েছে, আবার কোথাও কোথাও প্রকৃত সংখ্যা থেকে কমেছে। অনেক রাজাকার যুদ্ধপরবর্তী খোলস পাল্টে আওয়ামী লীগে মিশে গিয়ে নিজেদের নানাভাবে রক্ষা করেছেন।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতনভুক্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে, এমন রাজাকারের তালিকা চেয়ে চলতি বছরের ২১ মে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ২৮ আগস্ট পুনরায় তাগিদ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু সে অনুযায়ী খুব ভালো সাড়া মেলেনি।

এদিকে গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১১ হাজার রাজাকারের নাম পাওয়া গেছে। এগুলো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে এসব রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল। সেই সময় তারা বিভিন্ন থানা থেকে মাসোহারা পেত। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল এমন রাজাকারের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। এগুলোর অনুসন্ধান চলছে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত নথিপত্র ধ্বংস করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত ১৯৭১ সালের এপ্রিলে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। সেপ্টেম্বরে পাকবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনীর নাম ঘোষণা করে। স্থানীয় মেম্বারদের রাজাকার বাহিনীতে লোক সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, জামাতে ওলামা, কনভেনশন মুসলিম লীগসহ বহু পাকিস্তানপন্থি দল রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। মূলত দেশীয় এ পাক দোসরদের সহায়তা নিয়েই পাক আর্মি নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। এ ছাড়া সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন ২ লাখ মা-বোন।

বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ইশতেহার অন্তর্ভুক্ত করে। পরে তারা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামী শীর্ষ নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করে। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসির দড়িতে ঝুলানো হয় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলীকে। আর আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আজম ও সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ চিকিৎসাধীন মারা যান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচার প্রক্রিয়া এখনো চলছে। পাশাপাশি অন্য রাজাকারদেরও বিচার চলমান।

Comment here