নিজস্ব প্রতিবেদক : শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার এক বৃদ্ধ গতকাল শনিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৯০ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ মৃত্যুর আগে তার বাড়ির আশেপাশের মোট ১৮৯ জনের সংস্পর্শে গিয়েছিলেন। এ জন্য তার বাড়িসহ ৩৪টি বাড়ি লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ওই ৩৪ বাড়ি ছাড়াও নড়িয়া উপজেলার হাটবাজার লকডাউন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ পরিবারকে না দিয়ে আইইডিসিআরের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় দাফন করা হয়েছে।’
ডিসি বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি ও আশপাশের ৩৪টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। পাশের উপজেলায় ওই ব্যক্তির মেয়ে ও বোনের বাড়িও লকডাউন করা হয়েছে। এসব বাড়ির সদস্যদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নড়িয়া উপজেলার কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন।’
তিনি বলেন, ‘নজরদারি করতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন ও পৌর মেয়রদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মৃত ব্যক্তি নড়িয়ার অনেক মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাই এর সংক্রমণ ব্যাপক হওয়ার আশঙ্কা আছে।’
মৃত বৃদ্ধের বড় ছেলে বলেন, ‘আমার বাবা দেওয়ানবাগীর ভক্ত। গত ২০ মার্চ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় দেওয়ানবাগীর ওরস ছিল। তিনি ওরসের তিনদিন দেওয়ানবাগ দরবারে ছিলেন। বাবা সেখান থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে আমার ধারণা। কারণ আমাদের পরিবারে বিদেশফেরত কেউ নেই। গত এক মাসে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিদেশফেরত কেউ আমাদের বাড়িতে আসেনি। বিদেশফেরত কারও বাড়িতে আমরাও যাইনি। কাজেই বাবা দেওয়ানবাগীর ওরসেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
জানা যায়, গতকাল শনিবার নমুনা পরীক্ষার পর করোনায় বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর আগে গত বুধবার হঠাৎ অসুস্থ হলে ওই বৃদ্ধকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় পাঠান চিকিৎসকরা। পরে ঢাকার মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। শনিবারই মারা যান তিনি।
এদিকে, শনিবার রাত থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নড়িয়া উপজেলার সব গ্রামে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাইকিংও করা হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, ‘শনিবার ৯০ বছরের এক বৃদ্ধ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নড়িয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে। এই ভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় উপজেলার জনসাধারণকে জানানো যাচ্ছে, কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ, সার ও বীজের দোকান ছাড়া হাটবাজার, দোকানপাট বন্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘লকডাউন করা বাড়িগুলোর ওপর পুলিশ নজর রাখছে। যাতে করে তারা বাইরে বের না হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে।’
Comment here