৭ ব্যাংক পেল ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

৭ ব্যাংক পেল ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার

তারল্য সংকটে পড়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ইসলামিসহ মোট ৭টি বেসরকারি ব্যাংককে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে (এলএলআর) কোনো জামানত ছাড়াই বছরের শেষ কার্যদিবসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিন দিনের জন্য তাদের এই ঋণ সুবিধা দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরভিত্তিক আর্থিক প্রতিবেদন (ব্যালেন্স শিট) ভালো দেখানোর সুযোগ করে দিতেই এ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে সিকিউরিটিজ লিয়েন করে একই দিন ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল আরও ১৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এই সেই ৫ পাঁচ ব্যাংক, যাদের ২০২২ সালেও একই পন্থায় বড় অঙ্কের অর্থ ধার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার এই ৫ ব্যাংকের বাইরে আরও দুটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধার পেয়েছে। এগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। এই ৭ ব্যাংকে মোট ২২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ধার দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ব্যাংককে কত টাকার ঋণসুবিধা দেওয়া হয়েছে, সে তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

দায়িত্বশীল কেউ-ই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ব্যাংকগুলো তাদের প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেয় এবং ফেরত দেয়। সে প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রেখেছি এবং ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। ব্যালেন্স সিট ভালো দেখাতে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ব্যালেন্স সিট ভালো দেখাতে টাকা ধার দেওয়া হয়েছে এমনটি নয়। আমরা কারো প্রয়োজন হলে টাকা ধার দেই এবং নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাংকগুলো তা ফেরত দিয়ে থাকে। কোন ব্যাংককে কি পরিমাণ টাকা ধার দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তা প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।

এর আগে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিশেষ ধার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে পৃথক পৃথক আবেদন করা হয়। ওই আবেদনে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক অবস্থাও তুলে ধরা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত হয় ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে। আর্থিক প্রতিবেদনে যেন বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে না পারা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখাতে না হয় সে জন্য বিশেষ ধার দেওয়া হয়েছে। সাধারণত কোনো ব্যাংক নগদ টাকার সংকটে পড়লে আগে বিনিয়োগ করা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে ধার নেয়। তবে ৭টি ব্যাংকের পর্যাপ্ত সিকিউরিটিজ না থাকায় বিশেষ প্রমিসারি ডিমান্ড নোটের বিপরীতে তিন দিন মেয়াদে ধার দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক হলিডের কারণে গতকাল শেষ কর্মদিবসে লেনদেন বন্ধ থাকে। যে কারণে গত ২৮ ডিসেম্বর ওই ধার দেওয়া হয়। এজন্য ব্যাংকগুলোকে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। আজ সোমবার সুদসহ পুরো টাকা ব্যাংকগুলোর ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে আমাদের সময়। কিন্তু কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর ৩৬(১) ধারা অনুযায়ী আমানতকারীদের সুরক্ষায় প্রতিটি ব্যাংকের মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বর্তমানে প্রচলতি ধারার ব্যাংকের জন্য এ হার ১৭ শতাংশ। আর শরিয়াহভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকের জন্য সাড়ে ৯ শতাংশ। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে সরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ বা এসএলআর হিসেবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণ বা সিআরআর হিসেবে ৪ শতাংশ নগদে রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক যদি সিআরআর রাখতে না পারে তাহলে অসংরক্ষিত অংশের ওপর ৯ শতাংশ হারে দ-সুদ দিতে হয়। আর এসএলআর রাখতে ব্যর্থ অংশের ওপর ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ হয়। কোনো ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে ৪২ দিন ব্যর্থ হলে পরে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশের ৩৬(৫)(এ) অনুযায়ী প্রত্যেক পরিচালককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করতে হবে। এরপরও বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে ৩৬(৫)(বি) অনুযায়ী নতুন আমানত নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

সূত্রগুলো বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ধার নেওয়া ব্যাংকগুলোর বেশ কয়েকটি অনেক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত নগদ জমার হার (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) সংরক্ষণ করতে পারছিল না। এসএলআরের জন্য এসব ব্যাংকের কাছে যেসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছিল তা বন্ধক রেখে ধার করা টাকা খরচ করে ফেলেছিল। নতুন করে ধার নেওয়ার কোনো উপায়-উপকরণ ছিল না। কেবল আগে নেওয়া ধারের মেয়াদ বাড়াচ্ছিল। এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ৫ ইসলামী ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ২০ দিনের মধ্যে চলতি হিসাবে পর্যান্ত অর্থ সরবরাহ করতে না পারলে আলোচ্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন বন্ধে হুশিয়ারি দেওয়ার পর চারটি ব্যাংক তা এরই মধ্যে সমন্বয় করতে সক্ষম হয়েছে। আরেকটি ব্যাংক চলতি হিসাব সমন্বয়ে তিন মাসের সময় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

২০২২ সালেও শরিয়াভিত্তিক ৫ ইসলামী ব্যাংককে প্রায় ১৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১ দিনের জন্য ওই ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

Comment here