ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’র হামলা, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ত্রিপুরা সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টুডেসহ ভারতের একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে তারা পুলিশের উপপরিদর্শক। এ ছাড়া একজন ডেপুটি এসপিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবারের ওই ঘটনায় রাজ্য সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দক্ষিণ রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেলকে (ডিআইজি) তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের তিনজন সাব-ইন্সপেক্টরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- দিলু জামাতিয়া, দেবব্রত সিং ও জয়নুল হাসান। এ ছাড়া সহকারী কমান্ড্যান্ট (ডিএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা) কান্তি নাথ ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার স্থানে পশ্চিম ত্রিপুরার ডিএসপি কিরণ কুমারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দায়িত্ব অবহেলার কারণে পুলিশের ওই চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পরই রাতভর অভিযান চালিয়ে সাতজনকে আটক করেছে ত্রিপুরার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আইএএনএসকে জানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শেষে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পশ্চিম ত্রিপুরা পুলিশের এসপি কিরণ কুমার জানান, আগরতলার নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদকালে ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতির’ একটি প্রতিনিধিদল ত্রিপুরার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।
এই সময় সমিতির কিছু কর্মী জোর করে এএইচসি চত্বরে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে। পুলিশ দ্রুত প্রতিবাদকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক অনুরাগ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন করেন এবং মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল এবং ডিআইজি বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। এরই মধ্যে কার্যালয়ের চারপাশে ত্রিপুরা পুলিশের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ঢাকা এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ঢাকার অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ছিল না।’ তারা বলেছে, এই ঘটনা মিশনের কর্মীদের মধ্যে ‘গভীর নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি’ তৈরি করেছে এবং নয়াদিল্লির কাছে ‘তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, এই ঘটনা ‘গভীরভাবে দুঃখজনক’। কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি কোনোভাবেই লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়। সরকার বাংলাদেশ হাইকমিশনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
Comment here