জুলকার নাইন চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জে বীরশ্রেষ্ঠ কাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর নিচে বারোঘরিয়া প্রান্তে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। সেতুর খুব কাছাকাছি নদী হতে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে মহানন্দা সেতুসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ। রবিবার সকালে বালু উত্তোলনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নদীর অন্তত ২০ গজের মধ্যেই ফসলী জমির পাশেই চলছে সরাসরি নদী থেকে বালু উত্তোলন। ড্রেজারের তত্বাবধায়ক বিকাশ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব হারুনুর রশীদ, মো. কালুমুদ্দিন ওরফে ভাটা কালুর মাধ্যমে এসব বালু উত্তোলন করছেন। এখান থেকে বালু উঠিয়ে তা ভরাট করা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গেটের সামনের জায়গা। ১৫-২০ দিন হতে নদী থেকে সরাসরি বালু উঠানো হলেও এর আগে অন্য জায়গা থেকে নৌকায় করে নিয়ে এসে ভরাট করা হতো। নদীতে পানি কম হওয়ার কারনে নৌকা চলাচল করতে না পারায় নদীতেই ড্রেজার লাগিয়ে বালু উঠানো হচ্ছে বলে জানান বিকাশ।
মহানন্দা সেতুর বারোঘরিয়া গোল চত্তরের পাশে যে গর্তটি পূরন করা হচ্ছে, সেটি আবার সড়ক ও জনপদ বিভাগের। সেখানে সড়ক বিভাগের দুটি সাইন বোর্ডও লাগানো আছে এবং সেখানে একটিতে লেখা আছে, “এটি সড়ক বিভাগের আওতাধীন সম্পত্তি। যেকোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।” অপরটিতে লেখা আছে, “যোগাযোগ মন্রনালয়ের মহাসড়ক বিধিমালা-২০১১ অনুযায়ী সড়ক ও জনপদ সীমানা থেকে ১০ মিটারের স্থাপনা নির্মান দন্ডনীয় অপরাধ।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী সোহাগ আলী বলেন, এটা কিভাবে হচ্ছে? প্রশাসনের নাকের ডগায় ব্রীজের এত কাছ থেকে বালু উঠাচ্ছে কিভাবে? এটিই তো আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন শিক্ষক জানান, এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তারা জানায়, এমপি হারুন সাহেব এটি করছেন। তবে এটি কে করছেন সেটি আমাদের জানার দরকার নাই। প্রথমত এই বালু উত্তোলনটি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। দ্বিতীয়ত এটির কারনে মহানন্দা সেতু হুমকির মুখে পড়েছে ও তৃতীয়ত যেই যায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে, তা সড়ক বিভাগের। হয়তো এটি এমপির কাজ তাই প্রশাসনও নিরব!
এমপি হারুনের নামে বালু উঠানোর বিষয়ে বারোঘরিয়া নতুন বাজারের ষাটোর্ধ এক কৃষক বলেম, “সংসদে গিয়ে হুজুরগিরি, আর এখানে এসে বালু চুরি!”
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব হারুনুর রশীদ, এই কাজে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে মুঠোফোনে জানান, এই কাজটি এমপি কোটা হতে ত্রাণ মন্রনালয়ের মাধ্যমে করা হচ্ছে। সরকারি এই কাজে বালু উত্তোলনে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া এর আগে বারোঘরিয়া দৃষ্টিনন্দন পার্কের জায়গাটিও নদী থেকেই বালু উঠানোর মাধ্যমে ভরাট করা হয়েছে।
বালু উত্তোলনের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এটি করতে পারে না। সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার কথা থাকলেও সেদিন বিকেলে অনেকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি এবং তিনি পরিদর্শনেও জাননি। মঙ্গলবার সকালে মুঠোফোনে তিনি জানান, বারোঘরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার সেখানে গিয়ে সেটি বন্ধ করার কথা। তবে মঙ্গলবার সকালেও মহানন্দা সেতু চত্বরে গিয়ে দেখা যায় তখনও ড্রেজার চলছে।
Comment here