অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আগাম পরিকল্পনা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আগাম পরিকল্পনা

বর্তমানে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘর ছুঁইছূঁই করছে। ডলারের বাজারে অস্থিরতা, রাজস্ব ঘাটতি, এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ভাটা- সব মিলিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে সামগ্রিক অর্থনীতি। গত প্রায় দুই বছর ধরে ব্যয় সংকোচন করেও অর্থনীতিতে গতি ফেরানো সম্ভব হয়নি। অর্থনীতির এ করুণ দশা কাটাতে নতুন করে পরিকল্পনা করছে অর্থ বিভাগ। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে সবাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচনের পর নতুন সরকার যেন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কাজে হাত দিতে পারে সে জন্যই এ পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের ২০২৩-২৪ শেষ নাগাদ অর্থনীতিকে কোভিড-১৯-পূর্ব প্রবৃদ্ধির গতিতে ফিরিয়ে আনার আশা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থ বিভাগের ম্যাক্রোইকোনমি উইং প্রণীত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে ২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬’-এ অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালে মহামারী শুরুর পর গত তিন বছরের বেশির ভাগ সময়ে অর্থনীতি দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধির গতিপথ থেকে ছিটকে পড়েছিল। চীনের উহানে প্রাদুর্ভাবের তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত ত্রৈমাসিক জিডিপি ডেটা (আইএমএফ নির্ধারিত শর্ত অনুসারে) এটি প্রমাণ করে। এতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল থেকে জুন ২০২০) অর্থনীতি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, কারণ ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (আরঅ্যান্ডআর) ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব ছিল, যা এখন বাড়িয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করছে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারমুখী করে মুদ্রানীতির কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে। নতুন নতুন রপ্তানির বাজার সৃষ্টি করা হবে। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করা হবে। একেক পণ্যের নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা হবে। শুধু ইউরোপ আর আমেরিকায় নির্ভর না করে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বাজারকেও ধরার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

অর্থ বিভাগের পরিকল্পনা মতে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছিল, কিন্তু অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। এটাকে কমিয়ে আনাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব জানান, এ অবস্থায় সরকার চেষ্টা করছে সামগ্রিক আর্থিক খাতের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে। রপ্তানি বাড়াতে বিদেশি ক্রেতাদের ধরার চেষ্টা করছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে বড় কাজ উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সরবরাহ বাড়ানো এবং রিজার্ভের পতন আটকানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রপ্তানি আয়, প্রবাস আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদান কমছে। এটাকে গিয়ারআপ করার জন্যও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সরকারের ম্যাক্রোইকোনমিক পলিসি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মূলধন সংগ্রহ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি এবং তাই সরকার তার লক্ষ্য পূরণের জন্য সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার লক্ষ্য নিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৩২ শতাংশ, যেখানে বেসরকারি ও সরকারি খাতের অবদান ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিনিয়োগের মাত্রা আরও বাড়াতে হবে।

Comment here