অর্থপাচারের নিরাপদ রুট চট্টগ্রাম বন্দর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
চট্টগ্রামসমগ্র বাংলা

অর্থপাচারের নিরাপদ রুট চট্টগ্রাম বন্দর

মো. মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম : পোশাক কারখানার জন্য তুলা আমদানির ঘোষণা দিয়ে চীন থেকে এক কনটেইনার বালি নিয়ে আসে চট্টগ্রামের মেসার্স সৈয়দ ট্রেডার্স। এর মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে ধারণা কাস্টম কর্মকর্তাদের। গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার সিইপিজেডের বেসরকারি ‘কিউএনএস ডিপো’ থেকে কনটেইনারটি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। কেবল আমদানিকারক নয় ব্যাংকসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর এখন অর্থপাচারের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে। তবে ব্যবসায়ীদের নেতাদের দাবি, চায়না থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়েছেন আমদানিকারকরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝামেলা এড়াতে পণ্য আমদানির আড়ালে বৈধপথে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। এ জন্য চট্টগ্রাম বন্দরকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে একটি সিন্ডিকেট অর্থপাচারে সক্রিয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এ চক্রে জড়িত। মিথ্যা ঘোষণার পাশাপাশি কম এবং বেশি মূল্য দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়। চলতি বছরে বেশ কয়েকটি মামলা হলেও চক্রের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।

জানা গেছে, চীন থেকে সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে এক কনটেইনার বালি নিয়ে আসে গাজীপুর জেলার মির্জাপুর এলাকার এনজেড অ্যাক্সেসরিজ লিমিটেড। গত ৯ অক্টোবর চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরের ‘ওভারফ্লো ইয়ার্ডে’ আটক করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি নিষিদ্ধ সিগারেট এনে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। ফোন ও প্রিন্টিং মেশিন ঘোষণা দিয়ে সিগারেট এনে ২ কোটি টাকা পাচারের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৯ আগস্ট মানি লন্ডারিং আইনে ঢাকার পুরানা পল্টনের ড. নবাব আলী টাওয়ারের মেসার্স ‘গ্রামবাংলা ফুড করপোরেশন লিমিটেড’ এবং মতিঝিলের রহমান ম্যানশনের ‘মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজ’-এর নামে মামলা দুটি করা হয়।ads

জানা গেছে, মিথ্যা ঘোষণায় আসা পণ্য চালান আটক করলেও অধিকাংশ আমদানিকারকের ঠিকানা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ভুয়া ঠিকানায় পণ্য আমদানি হয়েছে। ব্যাংক ও কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই বিদেশে অর্থ পাচার হলেও সক্রিয় চক্র শনাক্তে ব্যর্থ কাস্টম কর্তৃপক্ষ। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকগুলো কীভাবে ঋণপত্র খুলেছে, সেটিও বিস্ময়ের ব্যাপার। ফলে এখন কেবল আমদানিকারকের পেছনে না দৌড়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দিকে নজর দিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার নুরউদ্দিন মিলন আমাদের সময়কে জানান, যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে পণ্য আমদানি করেছে আমরা এখন সেসব ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করছি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশি অর্থপাচারে জড়িত সবাইকে আমরা চিহ্নিত করতে চাই।

পণ্য আমদানির আড়ালে অর্থপাচারের বিষয়টি মানতে রাজি নন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের কনটেইনারে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণা করছে। ঋণপত্র খুলে খুব বেশি অর্থ বিদেশে পাঠানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে কাস্টম কর্মকর্তাদের মত ভিন্ন। তারা বলছেন, অনেক সময় মূল ডকুমেন্ট পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে প্রকৃতপক্ষে কত টাকা পাঠানো হয়েছে, তা বোঝা যায় না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রের চীনসহ বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য আমদানির নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠানো হয়। পরে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ সরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে জমা করে। এভাবে দুবাই, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীনসহ নানা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বাড়ি-গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন।

Comment here