‘আমি চলে গেলে কী হবে রোগীর’ করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের উদ্বেগ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

‘আমি চলে গেলে কী হবে রোগীর’ করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর সেবা দিতে দিতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। সে সময় জানতে পারেন, তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ঢাকায় কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তখন নিজের জন্য নয়, বরং রোগীর জন্যই তার কণ্ঠে শোনা যায় উদ্বেগ।

ওই চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার আমি এখন চলে গেলে ইমারজেন্সি ডিউটি কে করবে, কী হবে রোগী যদি আসে?’ গতকাল সোমবার রাতে এমন ঘটনা ঘটেছে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা আজ মঙ্গলবার সকালে এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি শেয়ার করেছেন।

দৈনিক আমাদের সময়ের পাঠকদের জন্য তার ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো-

যেমনটি নিজের অজান্তেই মনে হয়েছিল মনে হয় কিছু হলে সাভারে প্রথমেই প্রথম সারির যোদ্ধাদেরই হবে। তাই হয়েছে আমরা আজ যারা চিকিৎসকসহ ১০ জনের নমুনা পাঠিয়েছিলাম তার মধ্যে ৯ জন নেগেটিভ আর একজন চিকিৎসক পজেটিভ।

মোট সাভারে ৪১ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে ৪০ জন নেগেটিভ। কি ভাগ্য আমাদের!!!

আমি আমার যোদ্ধাদের মনোবল দেখে বিস্মিত তাকে বললাম আপনাকে তো কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তিনি তখনো জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি বললেন, স্যার আমি এখন চলে গেলে ইমারজেন্সি ডিউটি কে করবে, কি হবে রোগী যদি আসে?

চুপ হয়ে গেলাম ইচ্ছে করছিল অনেক আওয়াজ করে ছোট শিশুদের মতো কান্না করতে কিন্ত পারিনি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, আমি করব ইমারজেন্সি ডিউটি। আপনি চিন্তা করবেন না, আমার সিভিল সার্জন স্যার সাহস দিলেন। আমার যোদ্ধা এখন ভর্তি আছে।

আমাকে বলে স্যার আপনি আইসোলেশনে চলে যান, কারণ আজ সারাক্ষণ আমরা একসঙ্গে ছিলাম। একসঙ্গে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলাম। আজ আমি চলে আসলাম আইসোলেশনে। আমিসহ আমার ৪০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী আইসোলেশন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে।

বলেছি, সহকর্মীদের যদি বাঁচতে হয় একসঙ্গে লড়ে বীরের মতো বাঁচব আর মরতে হলেও বীরের মতো মরব। এত মানুষ আমাদের ভালোবাসে, নিশ্চয়ই মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের দেখে রাখবেন।

আমাদের সেবা কার্যক্রম যথারিতি চলবে। বাসায় থাকুন, ভালো থাকুন।

কৃতজ্ঞতা উপজেলা প্রসাশন, জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন স্যার। আপনারা আমাদের প্রেরণা।

যদি আমি ও আমার টিম বেঁচে থাকি দেখা হবে নিশ্চয়ই।’

উল্লেখ্য, সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হওয়ায় তাকে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সোমবার রাত ১০টার দিকে তার করোনার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। পরে রাত ১১টার দিকে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সাভারে শনাক্ত হওয়া তিনিই প্রথম করোনা রোগী।

Comment here